ক্লিক করুন এখানে

গরমে শিশুর যত্ন | Child care in summer

কখন ও প্রচন্ড দাবদাহ আবার কখন ও ঝড়, বৃষ্টি--  তাপমাত্রার এই ব্যাপক তারতম্য শিশুদের শরীরে অনেক সময় বিরুপ প্রভাব ফেলে। ফলাফল জ্বর, পেট খারাপ, সর্দি, কাশিসহ নানা শারীরিক অসুবিধা। তাই গরমের সময় দরকার শিশুর বাড়তি যত্ন।


 

কি কি হতে পারেঃ

১। গরমে শিশু ঘামতে পারে। যার ফলে শিশুর শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি লবণ বেরিয়ে যায় ও শিশুর পানিশূন্যতাসহ ভাইরাল জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে।

কি করবেনঃ বাচ্চার বয়স যদি ৬ মাসের কম হয় তাহলে মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ঠ। তবে   সময় বাচ্চাকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। আর বয়স ৬ মাসের বেশী হলে শিশুকে বেশী বেশী পানি খাওয়ান। একবারে বেশী না দিয়ে কম কম করে বার বার খাওয়াতে পারেন।  এ সময় বাচ্চা বাইরে না যাওয়াই ভালো তবে, একান্তই গেলে সাথে পানির বোতল দিন।


২। শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে।

কি করবেনঃ এ সময় অবশ্যই শিশুকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। ডাবের পানি বা অন্যান্য তরল খাবারও দিতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে, শিশু যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে। তার প্রস্রাব স্বাভাবিক ও নিয়মিত হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে। ডায়রিয়া হলে দ্রুত শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। কারণ দীর্ঘ সময় ডায়রিয়া পুষে রাখলে, শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে গিয়ে মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে।

সাবধানতাঃ শিশুকে গোসল করানোর সময় যেন মুখে পানি যেন না যায়। এই পানি পেটে গিয়েও ডায়েরিয়া হতে পারে।


৩। শিশুর শরীরে প্রচুর ঘামাচি হতে পারে

কি করবেনঃ শিশুকে প্রতিদিন হালকা গরম পানিতে গোসল করান। শিশুর শরীর মুছে নিন শিশুদের উপযোগী পাউডার লাগান।গোসলের পানিতে ডেটলও দিতে পারেন।


৪। শিশুর চুল ঘামতে পারে, খুশকি হতে পারে।

কি করবেনঃ গরমে চুলের গোড়া ঘেমে যায় দ্রুত। আর ধুলাবালু জমে যায়। তাই চুল নিয়মিত পরিচর্যা না করলে মাথায় খুশকি, ঘামাচি দেখা দিতে পারে। গোসলের পর চুল ভালোভাবে মুছে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে দিন চুল শুকিয়ে গেলে বেঁধে দিন। শিশুদের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

 

৫। ডায়পার র‍্যাশ হতে পারেঃ

কি করবেনঃ গরমে বাচ্চাকে ডায়াপার না পরানোই সবচেয়ে ভাল। কারন বেশী সময় ডায়াপার পরালে  ঘামের কারনে Bacterial Infection হতে পারে। একে Diaper Rash ও বলে। তাই ডায়াপার পরালে ঘন ঘন বদলাতে হবে  আর ডায়াপার পরানোর আগে বাচ্চার private area গুলো  ভালো ভাবে পরিস্কার করে দিন। একবার ডায়াপার খুলে আবার পরানোর আগে ৩০-৪০ মিনিটের বিরতি দিন। ডায়াপার নষ্ট হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেলে দিন। ডায়পার র‍্যাশ হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।


৬। ত্বকে সংক্রমনঃ

কি করবেনঃ বাচ্চাদের ত্বক নরম সংবেদনশীল হওয়ায় গরমে র‍্যাশ উঠতে পারে। তাই রোদে গেলে বাচ্চাদের উপযোগি সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন। এতে শিশুদের ত্বক সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির থেকে রক্ষা পাবে

  

গরমে শিশুর খাদ্যঃ

ক। গ্রীষ্ম কালে প্রচুর মৌসুমি ফল পাওয়া যায়।  যেমন আম, তরমুজ, পেঁপে, কলা ইত্যাদি। খেয়াল রাখুন, ফল যেন অবশ্যই কেমিক্যাল মুক্ত হয়। ফল খেতে না চাইলে, জুস করে দিতে পারেন। এতে শিশুর পুষ্টি পূরণ হবে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়বে। এছাড়া সবজি বা মুরগীর স্যুপ, ডাবের পানি, লেবুর রস দিতে পারেন। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা যেন না হয়।  

খ। বিভিন্ন রকম ফলের তৈরী কাস্টার্ড,পায়েশ,সালাদ এবং দই জাতীয় খাবার ইত্যাদি তৈরী করে খাওয়াতে পারেন।

গ। সবুজ শাক সবজি যেমন লাউ, শসা,পেপে—এগুলো খাওয়াতে পারেন।


সাবধানতাঃ বাচ্চার আইসক্রিম খাওয়া বা ঠান্ডা পানি খাওয়া এসময় বিপদ জনক হতে পারে। তাই এ সব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর গরমে যতটা সম্ভব শিশুকে নরম খাবার খাওয়ানো ভালো। বেশী গরম বা বেশী ঝাল কিছু দেবেন না।

 

গরমে শিশুর পোশাকঃ

ক। হালকা রঙের জামাকাপড় পরান কারন হালকা রঙ গরম তাড়াতাড়ি শুষে নিয়ে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

খ। পোশাক যেন আরামদায়ক ও ঢিলেঢোলা হয়। এ ক্ষেত্রে সুতি কাপড়ের তৈরী পোশাক সবচেয়ে আরামদায়ক। বাচ্চাদের সিন্থেটিক কাপড়ের তৈরী পোশাক পরানো থেকে বিরত থাকুন। কতে হবে।আর বাইরে গেলে বাচ্চাকে হালকা রংয়ের  ফুল হাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরাতে পারেন যাতে সরাসরি রোদ লাগতে না পারে।

 

কি করবেন না

১। জাঙ্ক ফুড যেমন পিজা, পাস্তা, বার্গার থেকে শিশুদের দূরে রাখুন।

২। ঠান্ডা লাগার ভয়ে বাচ্চাকে একেবারে কাঁথা-কাপড়ে মুড়িয়ে রাখবেন না। এতে ঘামাচি হতে পারে বা  ঘাম বসে বাচ্চার ঠান্ডা লাগতে পারে।  

৩। এয়ার কুলার কিংবা এসির বাতাস সরাসরি বাচ্চার গায়ে লাগতে দেবেন না। আর বাচ্চা অনেক ক্ষন এসি রুমে থাকলে বাইরে বের হবার ১৫ মিনিট আগে এসি বন্ধ করে দিন। যাতে বাচ্চা বাইরের তাপমাত্রার সাথে খাপ খাওয়াতে পারে।

 

সাবধানতাঃ

১। বাচ্চাকে মশা, মাছি, পোকামাকড় থেকে বাঁচাতে ঘরে ইনসেক্ট রিপেল্যান্ট ব্যবহার করতে পারেন বা মশারি টাঙিয়ে রাখতে পারেন। তবে মশার কয়েল ব্যবহার না করাই ভালো, কারন এর বিষাক্ত ধোঁয়া আপনার সন্তানের ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

If you have any doubts please let me know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.