শিশুদের অটিজম
অটিজমমূলত এক ধরণের স্নায়ুবিক বিকাশ-জনিত সমস্যা। অটিজম একটা জন্মগত ব্যাপার যা শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটু একটু করে প্রকাশ পেতে থাকে ।
অটিজমের লক্ষন কিঃ
১ অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা আপনার চোখে চোখ রেখে কথা বলবে না।
২ হঠাৎ করে কথা ও সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। তার সমবয়সী শিশুদের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায় না।
৩ শিশু আপন মনে থাকতে পছন্দ করে। নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেয় না।
৪ অটিস্টিক শিশুরা একই কথা বারবার বলে এবং একই কাজ বারবার করতে পছন্দ করে।
৫ কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে কথা বলায় জড়তা থাকতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যাবে শিশু একেবারেই কথা বলছে না বা কথা বললেও হয়তো গুছিয়ে বলতে পারে না।
৬ এই শিশুদের ধৈর্য কম থাকবে।
কি করবেনঃ
১ কোনো বাচ্চা যদি কথা না বলে, অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত। এটা সাধারণত তিন বছরের মধ্যে হতে হবে। যখন শিশুর কথা বলার সময়।
২ আপনি শিশুর সাথে খেলা করেন। বসে বসে তার সাথে কথা আদান-প্রদান করেন।
৩ বাচ্চাদের জন্য এখন বাংলাদেশেই বিশেষায়িত কয়েকটি স্কুল আছে, যেখানে তাদের জন্য বিশেষ পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। তবে এটা নির্ভর করবে তার অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এর পরামর্শের ওপর। তিনি বাচ্চার সক্ষমতা বুঝে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেবেন কোন স্কুল তার জন্য ভালো হবে।
৪ আপনার শিশুকে অন্য আত্মীয় বা বন্ধুদের সাথে মিশবার সুযোগ করে দিন। তাকে আগ্রহী করি তুলুন এ ব্যাপারে।
৫ বাইরে ঘুরতে নিয়া যান। তার পছন্দের কোন স্থান আছে কি না সেটি জানার চেষ্টা করুন। সে জায়গা গুলোতে বার বার যেতে পারেন।
কি করবেন না :
১ শিশুকে ভালো রাখার জন্য টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল বা ল্যাপটপ দিয়ে রাখবেন না।
২ হতাশ হওয়া যাবে না। ধৈর্যের সাথে শিশুর প্রতি সহনশীল হোন।
৩ শিশুর সামনে ঝগড়া করবেন না।
৪ তাকে অবহেলা বা অবজ্ঞা করবেন না।
৫ মেয়ে শিশু হলে পরিচিত বা অপরিচিত কারো কাছে বেশীক্ষন একা থাকতে দেবেন না বা খেয়াল রাখুন।
৬ তাকে ঘরে বন্ধ করে কোথাও যাবেন না। কাজের লোকের কাছে রেখে গেলে ঘরে ক্যামেরা বসিয়ে কর্ম স্থল থেকে মনিটর করতে পারেন।
৭ শিশুর মধ্যে যেন ভয়ের উদ্রেগ হয় এমন পরিস্থিতি থেকে তাকে বাঁচিয়ে রাখুন।
চিকিৎসাঃ অটিজমের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে শিশু বা ব্যক্তির দুর্বলতা কমানো, স্বাবলম্বী করে তৈরীর প্রচেষ্টা করা হয়।
১ আচরণগত থেরাপিঃ বিভিন্ন ধরণের সরঞ্জাম ব্যবহার করে শিশুর আচরণ শক্তিশালী করা হয়। সেই সাথে অবাঞ্ছিত অথবা অগ্রহণযোগ্য আচরণ কমানোর দিকে লক্ষ্য রাখা হয়।
২ জ্ঞানমূলক আচরণ থেরাপিঃ শিশুকে তার অনুভূতিগুলি চেনাতে এবং উদ্বেগের পরিস্থিতিগুলির সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। এভাবে এই প্রক্রিয়ায় চিন্তা এবং অনুভূতিগুলির উপর নজর দেয়া হয়।
৩ যুগ্ম মনোযোগ থেরাপিঃ এই থেরাপির মাধ্যমে শিশুর আন্তঃব্যক্তিগত মেলামেশা এবং পারস্পরিক ক্রিয়ার উপর মনোযোগ দেয়া হয়। দিকগুলি যেগুলির উপর মনোযোগ দেয় সেগুলির মধ্যে আছে যোগাযোগ এবং ভাষা।
৪ পেশাগত থেরাপিঃ এই থেরাপিতে শিশুদের নিয়মিত কাজ এবং রোজকার রুটিন সম্বন্ধে ক্ষমতা এবং চাহিদাগুলি খোঁজার ব্যাপারে মনোযোগ দেয়া হয়। শিশুটির স্বাধীনভাবে নিজের কাজ করতে পারে যেমন পোশাক পরা, খাবার খাওয়া, বাথরুমে যাওয়া ইত্যাদি।
৫ শারীরিক থেরাপিঃ শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি ও পেশীগত দক্ষতা বাড়াতে মনোযোগ দেয়া হয়।
৬ কথা-ভাষা থেরাপিঃ শিশুর কথাবার্তা বলায় উদ্যোগ নেওয়া, অন্য শিশুদের সাথে পারস্পরিক ভাব আদান প্রদান, খেলাধূলা, গল্প করাতে উৎসাহ দেয়া হয় এই থেরাপিতে। তাছাড়া যে কোন বস্তুর নাম বলা, অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন করা এবং কণ্ঠস্বরের মাত্রার ওঠা-নামা আরও ভালোভাবে করতে সাহায্য করে এই থেরাপি।
৭ পুষ্টি থেরাপিঃ অটিজম থাকা মানুষটি যেন স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য খায় এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় এদিকে খেয়াল রাখা হয়। পাশাপাশি, তার কিছু কিছু খাদ্যের প্রতি বিতৃষ্ণা থাকলে সেগুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেয়া বা এড়িয়ে চলা –এসবের দিকে নজর দেয়া হয়।
৮ অটিজমের ওষুধঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে অটিজম শিশুর খিঁচুনি বা অবসাদ হলে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টস (অবসাদ-প্রতিরোধী), অ্যান্টিকনভালস্যান্টস (খিঁচুনি বা তড়কা প্রতিরোধী) ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ নিতে পারেন অভিজ্ঞ চিকিৎসক থেকে।
পরিশেষে, অটিস্টিক শিশুদের কোনো নিশ্চিত চিকিৎসা নেই। পরিবার, আত্মীয়-পরিজন, সমাজ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, চিকিৎসকসহ সকলের সহযোগিতায় একটি অটিস্টিক শিশুর জীবন হয়ে উঠতে পারে আনন্দময়।

কোন মন্তব্য নেই
If you have any doubts please let me know