ক্লিক করুন এখানে

সন্তান স্কুলে যেতে চায় না | child refuses to participate in school

একটা বয়সে সন্তান স্কুলে যাবে,পড়াশোনা শুরু করবে,তার অনেক বন্ধু হবে,এটা সব বাবা, মা কাম্য। তবে বিভিন্ন কারনে শিশু স্কুলে যেতে অনীহা (child refuses to participate in school) প্রকাশ করতে পারে এবং এটা যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে মাঝেমধ্যে স্কুলে যেতে না চাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। 

 

কি কারনে হতে পারেঃ সব শিশুত একরকম নয়। জেনেটিক্যাল কারনে,কেউ খুব সহজেই সবার সাথে মিশতে পারে,সবার সামনে কথা বলতে পারে আবার কেউ পারে না। কেউ খুব সহজেই কোন পড়া মুখস্ত করতে পারে,স্যারকে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করে না,কারো কাছে এটি খুব কঠিন, ইত্যাদি। আসুন দেখি কি কি কারনে আপনার সন্তান স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করতে পারে।

 

১। প্রথম দিনে জড়তাঃ স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম দিন স্কুলে আপনার শিশু সংকোচ করবে, ভয় পাবে।

কি করবেনঃ সম্ভব হলে ক্লাসের ভেতরে বা  বাইরে এমন জায়গায় থাকুন, যেখান থেকে সে আপনাকে দেখতে পাবে। এভাবে কিছুদিন করতে পারেন। তবে শিশুকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিতে ভুলবেন না।

২। বন্ধুর অভাবঃ ভালো সহপাঠী থাকাটা জরুরী, যার সাথে সে নিজের মনের কথা শেয়ার 

করবে, পড়ার  জন্য  সাহায্য নেবে বা এক সাথে খেলবে। বন্ধু না থাকার জন্য সে স্কুলে যেতে  নিরাসক্ত হয়ে পরতে পারে

কি করবেনঃ বন্ধু তৈরী করতে উৎসাহ দিন,নিজে স্কুলে গিয়ে বন্ধু বানাতে সাহায্য করুন বা অন্য অভিভাবকের সাথে কথা বলে ও এ ব্যাপারে সাহায্য নিতে পারেন।

৩। উত্ত্যক্ত বা ঠাট্টা করলেঃ হয়ত স্কুলের কোন ছেলে বা মেয়ে আপনার শিশুকে অযথা ঠাট্রা,টিপ্পনি, মানসিকভাবে আঘাত করছে। যেটি আপনার সন্তানের মধ্যে অনীহা তৈরি করছে।

কি করবেনঃ সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলুন। সরাসরি কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করবেন না। যে বিদ্রুপ করছে তাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলতে পারেন। আপনার সন্তানও যেন অন্য কাউকে হেয় না করে, সেই শিক্ষা দিন

৪। পারিবারিক অশান্তিঃ পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনবরত ঝগড়া সন্তানের মনে একধরনের মানসিক অশান্তি তৈরী করে।  স্কুলে গেলেও সে সহজ  স্বাভাবিক  হতে পারেনা

কি করবেনঃ বাবা, মা’র উচিত, অন্তত সন্তানের সামনে যে কোন বিষয়ে ঝগড়া না করা। আপনার সন্তানের মানসিক ও বুদ্ধি বিকাশে পারিবারিক শান্তি ও স্থিতি খুব জরূরী।


৫। পড়া কঠিন লাগেঃ স্কুলের পড়া বুঝতে কষ্ট হচ্ছে বা শিক্ষকের সহযোগিতা পাচ্ছে না—এ সব ক্ষেত্রে ও স্কুলে যেতে গড়িমসি করতে পারে আপনার সন্তান।

কি করবেনঃ   ক্লাশে সামনের সারিতে বসতে বলুন তাকে।  কোন কিছু না বুঝলে প্রশ্ন করতে  বলুন বা পাশের সহপাঠীর সাহায্য নিতে বলুন।


৬। বাবা, মা অবহেলাঃ যে পরিবারে বাবা, মা দুজন জব করেন, তারা হয়ত সন্তানের স্কুল যাওয়ার ব্যাপারে অনেকটা ঘরের আয়া বা কাজের লোকের উপর নির্ভর করেন। এসব ক্ষেত্রে সন্তানের মনে স্কুলে অনীহা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।

কি করবেনঃ সব সময় না পারলেও, মাঝে মাঝে ছেলে/মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যান। প্রশংসা করুন, উৎসাহ দিন।



৭।শারীরিক শাস্তিঃ স্কুলের কোন টিচার রাগি মেজাজের,যে পড়া না পারার জন্য হয়ত 

প্রায়ই বকা দিচ্ছে  বা মারছে আপনার সন্তানকে স্কুলভীতির এটি একটি বড় কারন

কি করবেনঃ সংশ্লিষ্ট টিচারের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন।তাতে কাজ না হলে কতৃপক্ষকে কে জানান


৮।স্কুলে যেতে বাধাঃ বিশেষ করে মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে এটি হতে পারে। নিজের ক্লাসের সহপাঠী বা অন্য কোন প্রতিবেশী যদি বাজে ব্যবহার করে তাহলে শিশু স্কুলে যেতে চাইবেনা।

কি করবেনঃ খোলাখুলি কথা বলুন, এরকমটি হচ্ছে কি না। প্রয়োজনে ব্যাপারে খোঁজ খবর নিন ব্যাবস্থা নিন।

৯। লম্বা ছুটিতে থাকলেঃ অসুস্থতা বা অন্য যে কোন কারনে হোক, লম্বা ছুটির পর শিশু স্কুলে যেতে বিরক্ত হতে পারে।

কি করবেনঃ সাথে করে নিয়ে যান। ক্লাশে তার সাথে বসতে পারেন কিছু সময়। দেখুন সে যেন অন্য বন্ধুদের সাথে কথা বলে। স্কুল শেষে ভালো খাবার বা পুরস্কারের ও লোভ দেখাতে পারেন।

১০। অভিভাবকের আচরণঃ বাবা মারা পড়াশোনা নিয়ে অনেক সময় তিরস্কার করেন বেশী চাপ দেন বা অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে নেতিবাচকভাবে তুলনা করেনযেটি হীনমন্যতা সেই সাথে স্কুলভীতি তৈরী করে।

কি করবেনঃ  তাকে কোনো প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দেবেন না। ভালো রেজাল্ট করতেই হবে- এমন  টার্গেট দেবেন না। সে তাতে মানসিক চাপ অনুভব করবে।

১১।স্কুলের পরিবেশ: খেলাধুলা বা বিনোদনের ব্যবস্থা কম থাকা,স্কুল ছোট ইত্যাদি বিতৃষ্ণা তৈরি করতে পারে

কি করবেনঃ ভালো বন্ধু নির্বাচনে সহায়তা করুন। মনমত সাথী পেলে এগুলো কোন সমস্যা নয়।

১২। শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনঃ বাংলা মাধ্যম থেকে ইংরেজি অথবা ইংরেজি মাধ্যম থেকে বাংলা মাধ্যমে যাওয়ার কারনে শিশুর খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হতে পারে।

কি করবেনঃ পড়ায় নিজে সময় দিন বা দরকার হলে টিঊটর রাখুন।যাতে সে পিছিয়ে না পড়ে।

 

আরো কিছু কথাঃ

১। স্কুলে যাবার জন্য জোর করা ঠিক নয়।অনাগ্রহের কারণ আন্তরিকভাবে তার কাছে জানতে চান। প্রয়োজনে শিক্ষকের সাহায্য নিন

২। স্কুল সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দিন। স্কুলবিষয়ক তার মনোভাব জানুন।

৩। স্কুলে কোনো সমস্যা আছে কি-না তাকোন ভয় পায় কি না, কেউ বিরক্ত করে কি-না খোলাখুলি আলোচনা করুন।

৪। স্কুলের যেকোন প্রোগ্রাম যেমন স্পোর্টস, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এরকম কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশায় উৎসাহ দিন।

৫। সব সময় তাকে বোঝাবেন সে যেন কোন কিছু গোপন না করে এবং সব সমস্যাতে   বাবা-মা'ই তাকে সাহায্য করবে।

 


 




কোন মন্তব্য নেই

If you have any doubts please let me know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.