শিশু অতিরিক্ত চঞ্চল | Restless kids
শিশুরা, বিশেষ করে ছেলে শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশী চঞ্চল হয়। ছেলে বা মেয়ের দুই বছর হলে অনেক সময় তাদের দুরন্তপনায় ধৈর্য হারান বাবা-মা। অনেক ক্ষেত্রে ওদের দুষ্টুমি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। ঠিক সময়ে শাসন না করলে ভবিষ্যতে এটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে।
লক্ষনঃ
চঞ্চলতা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে সেটি রোগের পর্যায়ে চলে যায় এবং এই সমস্যার নাম, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভ (ADHD) ডিজর্অডার, বাংলায় বলা যেতে পারে 'অতিরিক্ত চঞ্চল শিশু'।
এই সমস্যার মূল লক্ষণগুলো হচ্ছে-
১। পড়ালেখা, খেলাধূলা কোনো কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারে না। কথা মনোযোগ শোনে না।
২। বন্ধু বান্ধব বা অন্য কারো সাথে মিশতে
না
পারা। অন্যদের বিরক্ত করা
বা মুরব্বিদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা।
৩। নিজের
মনমতো
কাজ
করা
ও
নিজের
ইচ্ছাকেই
সবসময় প্রাধান্য
দেয়া।
৪। হঠাৎ
রেগে
যাওয়া,
জিদ
করা
বা
মারমুখি
হয়ে উঠা।
৫। গুছিয়ে
কাজ করতে
না
পারা,
কাজে
ভুল
করা, জিনিসপত্র
হারিয়ে
ফেলা।
৬। এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে না পারা। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে
ছোটাছুটি,
লাফালাফি করা।
৭। অপ্রয়োজনে
ও
অপ্রাসঙ্গিক
কথা
বলা।
অন্যের
কথার
মাঝে
কথা
বলা
ও
তাদের
কথায়
কান
না
দেয়া। ধৈর্য ধরতে পারে না।
৮। হঠাৎ করে কিছু করে ফেলা যেমন কোন কিছু ভেঙ্গে ফেলা বা নষ্ট করে ফেলা অথবা এমন কিছু করা যার পরিণতি সে অনুধাবন করতে পারে না।
৯। প্রশ্ন করার আগেই উত্তর দেয়া, অন্যের কথায় বাধা দেয়া।
কেন
চঞ্চল হয়ঃ
১। পরিবারের
অন্য
কারো ADHD
অথবা
কোন মানসিক
সমস্যা
থাকলে।
২। মায়েরা বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীন সময় মদ বা অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করলে।
৩। বাবা-মার
কাছ
থেকে
যথেষ্ঠ
স্নেহ ভালোবাসা না পেলে।
৪। জন্মের
সময়
শিশুর
ওজন
কম
থাকলে বা
শিশুর জন্মের সময় কোনো জটিলতা
হলে।
৫। ছোটবেলায়
শিশু মাথায়
আঘাত পাওয়ার কারনে ব্রেনে চাপ পড়লে।
৬। শিশুর
আশেপাশের
পরিবেশ তার অনুকূলে না থাকলে, অর্থাৎ সে যদি অনবরত ঘরে ঝগড়া বিবাদ,
মারামারি বা কোন অন্যায় হতে দেখে যা তাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে।
৭। শিশু
অপুষ্টিজনিত
কারণে ও
ADHD রোগে ভুগতে পারে।
কি
করবেনঃ
১। ঘরে
টিভি,
ট্যাবলেট
কম্পিউটারের
ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে আপনার সন্তানকে খোলা
স্থানে
প্রকৃতির কাছাকাছি খেলবার সুযোগ দিন।
২। বাচ্চারা ভুল করবেই,এজন্য সাথে
সাথে শাসন না করে তাকে একটু সময় দিন।সুন্দর করে বুঝিয়ে বলুন,যাতে একই ভুল বার বার না
করে।
৩। বাচ্চার
পছন্দ অনুযায়ী
তাকে বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যস্ত রাখুন,যেমন গান বা নাচ শেখা, ছবি আঁকা, সাতার কাঁটা,
ফুটবল বা অন্যান্য খেলার ট্রেনিং নেয়া, সাইক্লিং করা ইত্যাদি।
৪। ঘরের ছোটখাটো কাজের দায়িত্ব দিতে পারেন তাকে।
যেমন নিজের জামা কাপড়, জুতা, যথা স্থানে রাখা, পড়ার টেবিল পরিষ্কার রাখা ও খাতা,বইপত্র
গুছিয়ে রাখা। এতে তার মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি হবে।তাছাড়া সময় মত নিজের পড়া করা,গোসল,খাওয়া,
খেলাধূলা ও ঘুমানোর অভ্যাস যেন গড়ে উঠে সেটি ও খেয়াল রাখতে হবে।
৫। সন্তানের প্রতি কোন সময়ই অবহেলা করবেন না বা তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য
করবেন না। আপনি বাবা-মা বলেই আপনার সব কথাই তাকে শুনতে হবে ও তার কোন কথা আপনি আমলে
নেবেন না—এমন পরিস্থিতি যেন না হয়।বরং
তাকে স্নেহ ভালোবাসা ও উৎসাহ দিয়ে তার ভুল গুলো ধরিয়ে দিন।
৬। সন্তানের ইচ্ছা ও আকাংক্ষাকে গুরুত্ব দিন।মনোযোগ দিয়ে তার কথা
শুনুন।তারপর মন্তব্য করুন।তার কথা মানবেন না বলে প্রথমেই “এটা দেয়া যাবেন না” বলে
তাকে হতাশায় ফেলবেন না।
৭।কোন অবস্থাতেই বাড়ির পরিবেশ যেন সন্তানের প্রতিকূলে না যায়, যেমন
বাবা
মা বা পরিবারের অন্য কেউ চিৎকার করে ঝগড়া করলে,একে অপরকে দোষারোপ করেন, জিনিস পত্র ছুঁড়লে
বা মারামারি করলে সন্তানের মনে ভয়ংকর চাপ পড়ে
ও পরবর্তীতে তারাও এ জাতীয় আচরনে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে।
৮। আপনার
বেধে দেয়া ঠিক ঠাক করতে পারলে বাচ্চার প্রশংসা করুন, এমনকি পুরস্কারের
ব্যবস্থা
ও করতে পারেন। এতে সন্তানের মধ্যে কাজ করার প্রতিযোগিতার মনোভাব জাগ্রত হবে, চঞ্চলতা ও অনেকটা কমে আসবে।
৯। তার
সাথে গল্প করুন। হতে পারে তার কোন বন্ধুর বা স্কুলের গল্প, কিন্তু আপনাকে মনোযোগের
সাথে তার কথা শুনতে হবে। বাচ্চারা কিন্তু অবহেলা সহ্য করতে পারে না।
১০।
বাচ্চা চঞ্চল হতেই পারে,ঘরের জিনিস ভেঙ্গে ফেলতে বা নষ্ট করে ফেলতেই পারে। এজন্য
তাকে তখনই শাস্তি দেবেন না। প্রথমে
বুঝিয়ে বলুন।তবে তার পর থেকে হালকা শাসন করতেই পারেন।তবে সে শাসনে যেন ভালোবাসা
মেশানো থাকে।

কোন মন্তব্য নেই
If you have any doubts please let me know