ক্লিক করুন এখানে

নর্মাল ডেলিভারীর খুটিনাটি । Normal delivery tips

নারীর পরিপূর্নতা  মাতৃত্বে। সন্তানের জন্ম দেয়া প্রতিটি মায়ের জীবনে একটি অতি গুরুত্বপূর্ন  ঘটনা।তবে নরমাল ডেলিভারি প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক মায়ের মনে অজানা ভীতি কাজ করে। আসুন এ ব্যাপারে, কিছু আলোকপাত করি।   




 কেন করাবেনঃ

১। সিজার-জনিত জটিলতা থেকে মা মুক্ত থাকবে; কারন সিজারে কিছুটা হলেও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি থেকে যায় আর সিজারিয়ান ডেলিভারিতে ব্লিডিং এবং ইনফেকশন হবার আশঙ্কা নরমাল ডেলিভারির তুলনায় বেশি থাকে।

২। সিজারের কারনে পেটের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হতে পারে।

৩। বাচ্চা নরমাল প্রক্রিয়ায় হবার কারণে এদের শ্বাসকষ্ট এবং অ্যালার্জিজনিত রোগে ভোগার আশঙ্কা কম থাকে।

৪। সিজারের রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সাধারণত দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে আর নরমাল ডেলিভারির রোগী খুব তাড়াতাড়ি ২-৫ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়।

৫। সিজারিয়ান শিশুরা সাধারণত খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকে।

৬। নরমাল ভাবে জন্ম হওয়া শিশুর মায়ের দুধ পানে কোন সমস্যা হয় না, অন্যদিকে সিজারিয়ান শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানে তুলনামূলক সমস্যা হতে দেখা যায়। কারন সিজারিয়ান অপারেশনে মাকে অস্ত্রোপচারের জন্য যেসব ওষুধ দেয়া হয়, তা নবজাতকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বুকের দুধ পানে বাধার সৃষ্টি করে।

 

৭।ল্যাটিন আমেরিকান হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের মতে- সিজারিয়ান করা মায়েদের মৃত্যুঝুঁকি স্বাভাবিক প্রসবের মায়েদের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশী।

৮।সিজারিয়ান শিশুর রক্তে সংক্রমনের হার বেশি থাকে, যার ফলে জন্ডিস দেখা দেয়ার আশঙ্কা ও তূলনামুলক বেশী থাকে।

 

৯।নরমাল ডেলিভারি শিশুদের ফুসফুসের ক্ষমতা ভালো থাকে, ফলে পরবর্তীতে হাঁপানি বা অন্যান্য ফুসফুস জনিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়।

 

১০।সিজারিয়ান শিশুর বিভিন্ন অ্যালার্জির প্রবণতা ও ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

 

 

কি করবেনঃ গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী  চলুন ও তাঁর উপদেশ, নির্দেশ মেনে চলুন।

১। নরমাল ডেলিভারির জন্য আপনাকে যতটা সম্ভব টেনশন, বিরক্তি এবং হতাশা থেকে দূরে থাকতে হবে। চেষ্টা করুন সব সময় হাসি খুশি থাকতে, আনন্দে থাকতে। এজন্য ভালো বই পড়ুন, মুভি দেখতে পারেন বা আপনার পছন্দের মানুষদের সাথে সময় কাটান। অস্বস্তিকর ও অনাকংখিত পরিস্থিতি থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

২। প্রচুর স্বাস্থ্যকর খাবার, টাটকা ফল শাক-সবজি খান। মনে রাখবেন, পুষ্টি কেবল নিজের স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, আপনার শিশুর বিকাশের জন্যও জরুরী।  আর প্রেগন্যান্সি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট মেনে চলুন, মাল্টিভিটামিন খেতে পারেন।

৩। যদি ডাক্তার রেস্টে থাকতে না বলেন, এবং আপনার অন্য কোনও জটিলতা না থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হাঁটুন, হালকা ব্যায়াম (normal delivery exercise) করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় শ্বাসের  ব্যায়াম খুবই জরুরী, কারণ শিশুর জন্মের সময় আপনাকে সময়মত শ্বাস বন্ধ করে রাখতে হবে। নবজাতকের বৃদ্ধির জন্য যথাযথ পর্যাপ্ত অক্সিজেন অপরিহার্য। যোগাসন বা হালকা ব্যয়াম ও করতে পারেন। এতে ওজন ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৪। গর্ভাবস্থায় প্রতি দিন থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। এতে রক্ত চলাচল ভালো হয়, কনস্টিপেশনের সমস্যা হয় না। ডেলিভারির প্রক্রিয়া ও অনেক সহজ হয়।

৫। আপনার যদি কোন রোগ থাকে যেমন ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস বা কিডনী রোগ, তবে নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে আগে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা নিন।

৬। গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ম্যাসেজ নেয়ার ব্যবস্থা নিতে পারেন। এতে ব্যথার উপকার হবে, পেশীর টান ও কম হবে।

৭। গর্ভাবস্থায় বা হাসপাতালে এক জায়গায় বেশীক্ষন বসে থাকবেন না। ধীরে ধীরে হলে ও হাঁটুন। আপনার চলাচল প্যাভিলিয়ান পেশীকে শক্তিশালী করে ও নর্মাল ডেলিভারীকে সহজ করে দেয়।

৮। গর্ভাবস্থায় আপনার মা, বোন এবং কাছের লোকদের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। কারন তারাই আপনাকে মানসিক ভাবে সাহস দেবে ও যে কোন পরিস্থতিতে আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তাই শুধু আপনার শুভাকাংখীরাই যেন এ সময় আপনার আশেপাশে থাকেন।  

৯।  নিজের উপর আস্থা রাখুন। ডাক্তারের বলা অনুযায়ী চললে, আপনার ভয়ের কোন কারন নেই।

১০। হাস পাতালে যাবার আগে, একটু পড়াশোনা করে নিতে পারেন, যেমন বিভিন্ন বই পড়তে পারেন নর্মাল ডেলিভারি নিয়ে বা অনলাইনে প্রচুর পড়াশোনার সুযোগ আছে। দরকার শুধু আপনার স্বদিচ্ছার।

 

যখন  সিজার করতেই হবেঃ

 

১। মায়ের পেটে শিশু যদি  সঠিক অবস্থানে (normal delivery baby position) না থাকে।

২। প্রসব রাস্তায় কোন সমস্যা থাকলে।

৩। গর্ভবতী মা শারীরিক ভাবে দুর্বল থাকলে।

৪। গর্ভবতী মায়ের যদি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিকস বা অন্য কোন জটিল রোগ থাকে।

৫। গর্ভবতী মায়ের প্রসবের রাস্তায় যদি কোন টিউমার থাকে ।

৬। গর্ভস্থ শিশুর মাথার আয়তন যদি প্রসব রাস্তার চেয়ে বড় হয়।

৭। নাভি রজ্জু বা আম্বিলিক্যাল কর্ড যদি প্রসব পথে বেড়িয়ে আসে।

৮। প্রসব রাস্তা দিয়ে রক্ত ক্ষরণ (normal delivery blood loss) হলে।

 

জেনে রাখুনঃ

১। আমেরিকাতে প্রতিদিন ১০,০০০ শিশুর জন্ম হয়, এর এক তৃতীয়াংশ পৃথিবীর আলো দেখে  সিজারের মাধ্যমে। আর এই সংখ্যাটি দিনে দিনে বাড়ছে।

৩। প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম হয় ৮৩% এর ও বেশী । সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এটি ৩৫% বা তার চেয়ে বেশী।

 

সাবধানতাঃ 

১। নরমাল ডেলিভারি একটি কষ্টকর প্রক্রিয়া হলেও মা ও বাচ্চা উভয়ের জন্যই এর সুফল রয়েছে। 


২। ডেলিভারি পেইন উঠানোর জন্য কোনো ধরনের ওষুধ বা খাবারের দরকার হয় না, এটি স্বাভাবিক নিয়মেই হয়। তবে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ইন্ডাকশনের মাধ্যমে ডেলিভারি পেইন উঠানো সম্ভব।


মনে রাখবেন নরমাল ডেলিভেরি সবার কাম্য কিন্তু কিছু কিছু পরিস্থিতিতে নরমাল   ডেলিভেরি জীবনের জন্য ঝুকির কারন হতে পারে। তাই ডাক্তারের কথা অনুযায়ী, সব দিক বিবেচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন।  


কোন মন্তব্য নেই

If you have any doubts please let me know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.