ক্লিক করুন এখানে

শিশুদের সামনে যা করবেন না | What no to do in front of child

প্রতিটা শিশুই আসলে খুব ভাল শ্রোতা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের দেখেই তারা শেখে। শিশুর আচরণ দেখেই পরিবারের বড়দের আচরণ কেমন তা অনেকটাই ধারনা করা যায়।  মা-বাবার ভেতরে সুন্দর সম্পর্ক দেখলে শিশুও কিন্তু তাই শেখে। একই ভাবে দুজনের মধ্যে ঝগড়াঝাটি দেখলে তার প্রভাবও পড়ে শিশুর ওপর।



শিশুদের সামনে যা করা অনুচিতঃ

১। আপনার ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। “মেয়েদের এটা করতে নেই, ওটা ছেলেদের কাজ” এরকম বলা  বা মেয়ের চেয়ে ছেলের বেশী যত্ন নেয়া বা খেয়াল রাখা অথবা যে কোন ভাবে মেয়ের প্রতি অবহেলা করা – ইত্যাদি একদম করা ঠিক নয়। আপনার ছেলে এবং মেয়ে যেন সমান আদর ও ভালোবাসা পেয়ে বড় হয় সেটি দেখুন। তা না হলে ভবিষ্যতে বাবা মা’র প্রতি সন্তানের একরকম নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে, যেটি আপনার সাথে আপনার সন্তানের দূরত্বই শুধু বাড়াবে।

 

২। আপনার সন্তান কে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে দিন। তাদের স্বভাবসুলভ কাজে বাধা দেবেন না বা ভুল করলে রাগ করবেন না। ভুল করতে করতে শিখতে দিন। দেখবেন নিজেরাই শুধরে নেবে‌। এতে তাদের মনে আত্ম বিশ্বাস তৈরী হবে।

৩। মা-বাবার মধ্যে অশান্তি হলে তার ছাপ বাচ্চার মধ্যেও পড়ে। প্রতিদিনের ঝগড়া, চেঁচামেচি, শিশুদের মনে বিরুপ প্রভাব ফেলে। এসব বিবাদের মাধ্যমে শিশু তার ঝগড়াটে মাতা-পিতার ওপর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে । নিজেদের অসহায় মনে করতে শুরু করে। বিমর্ষতা, সিদ্ধান্তহীনতায় এসব তাকে পেয়ে বসে। এভাবে চলতে থাকলে তার শৈশব হয়ে উঠতে পারে একঘেয়ে,নিরানন্দ ও বন্ধুহীন। 

তাই নিজেদের ঝামেলা সন্তানের আড়ালে অন্য কোথাও বসে মিটিয়ে ফেলুন। কিন্তু কখনই সন্তানকে সামনে অথবা তাকে বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে ঝগড়া করবেন না। কারণ একে অন্যের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করলে সন্তানও তেমনটা দেখে বড় হবে। সেও তখন অন্যদের সঙ্গে রূঢ় আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। 

৪। বাচ্চাদের সামনে ধূমপান এবং মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকুন। এগুলো  কেবল আপনার স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকারক নয় বরং আপনার বাচ্চারা ক্ষতি করছে। দীর্ঘদিন সিগারেটের ধোঁয়া নিলে, শিশুর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, হাঁপানি, কানের সংক্রমণ ইত্যাদি হতে পারে। তাই আপনার যদি এই অভ্যাস থেকে থাকে, অন্তত, বাচ্চাদের সামনে এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। 

৫। প্রতিটি সন্তানের কাছে পিতামাতা হল রোল মডেল। কারও সাথে খারাপ আচরন -আপনার সন্তানের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। এজন্য বাচ্চাদের সামনে কাউকে বকা বা গালি দেবেন না। সেটা আপনার ঘরে কাজ করা কাজের লোক, ড্রাইভার,দারোয়ান, বাইরে রিক্সাওয়ালা বা বাসের হেল্পার যেই হোক। কারন,পরবর্তীতে সে আপনাকে অনুকরণ করা শুরু করতে পারে। 

৬।সন্তানদের যথেষ্ঠ সময় দেয়ার পরিবর্তে আপনি যদি বাসায় ট্যাবলেট, স্মার্টফোন বা  ল্যাপটপে সময় ব্য়য় করেন, তবে আপনার শিশু গ্যাজেটগুলির প্রতি আকৃষ্ঠ হয়ে পড়বে। কারন সে আপনাকে গ্যাজেটগুলির সাথে সময় কাটাতে পর্যবেক্ষণ করেছে। সন্তানদের কথা ভেবে হলে বাসায় শিশুদের সময় দিন, তাদের সাথে সময় কাটান, গল্প করুন, বই পড়তে উৎসাহ দিন বা বাইরে খেলতে/বেড়াতে নিয়ে যান। 

৭। বাচ্চাদের সঙ্গে উচ্চস্বরে বা রাগের সাথে কথা বলবেন না,আপানার বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে পারেন যে আপনি কোন কাজে ব্যস্ত আছেন। কারন এরুপ করলে তারা হীন্মন্যতায় ভুগতে শুরু করে,তাদের মনে আপনাকে নিয়ে একটি ভীতি ও তৈরি হতে পারে। আর তাদের মানসিক বিকাশ ও ব্যাহত হবে এ কারনে। 

৮।বাচ্চারা কোনো ভুল করলে তাদের মারধোর করবেন না, বরং তাকে বুঝিয়ে দেবেন যে আপনি মন খারাপ করেছেন। কিন্তু পরে অবশ্যই বুঝিয়ে বলবেন যে এটা এভাবে করলে হয়ত ভালো হোত।দেখবেন তারা পরের বার আর ভুল করবে না। 

৯। বাচ্চা আপনার কাছে কিছু চাইলে বা কোন কিছু করার আগে, অনুমতি চাইলে, সরাসরি ‘না’ বলবেন না। এতে সে হতাশ হয়ে যাবে, বিমর্ষ হয়ে পড়বে বা আপনার প্রতি নেতিবাচক ধারনা পোষন করবে ।‌ বরং সে যদি এমন কিছু করতে চায়, যেটি করা ঠিক নয়, তাকে সেটি বুঝিয়ে বলাই ভাল। 

১০। বাচ্চাদের সামনে কারো সাথে মারামারি - একেবারেই করা যাবে না। এর দুটি প্রতিক্রয়া হতে পারে। এক, সে বাবাকে (বাবা বা অন্য যে কেউ হোক) খারাপ ভাবতে পারে অথবা এই কাজটি সে ও পরে কোন এক সময় কারো সাথে প্রয়োগ করতে পারে। এমনকি,বাচ্চারা যেন এধরনের কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয়, সেদিকে নজর দিন।

১১।বাচ্চাদের সামনে অন্যের সমালোচনা করবেন না, অন্যের ভুলত্রুটি নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। এতে তাদের চরিত্রে একটি বড় ধরনের খারাপ প্রভাব থেকে যায়। তার মধ্যেও ঐ সমালোচনা করার প্রবণতা থেকে যাবে। বরং অন্যের (আপনার বাচ্চার বন্ধু বা পরিচিত কেউ) ভালো গুন গুলো আপনার সন্তানের সামনে তুলে ধরুন। তাদের প্রশংসা করুন। দেখবেন আপনার সন্তান ও এই গুন রপ্ত করে নেবে।

১২।আপনার বাচ্চার বিভিন্ন দূর্বলতা থাকতে পারে, যেমন,সে হয়ত মিশতে পারে না, পড়াশোনায় ভালো নয়, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে না ইত্যাদি। এসব নিয়ে কখনও তিরষ্কার করবেন না। তার ও নিশ্চয়ই ভালো কোন গুন আছে, সেগুলো নিয়ে আগে কথা বলুন, তারপর তার দূর্বলতা নিয়ে জিজ্ঞেস করুন,তার সমস্যা কি জানুন।তাকে ভরস দিন,আশ্বাস দিন। 

১৩।আপনি যে ভঙ্গিমায় কথা বলেন, যে শব্দ ব্যবহার করেন, এ সব কিছুই শিশুরা খেয়াল করে, ও নিজের অজান্তেই রপ্ত করে ফেলে । তারপর কোন না কোন সময় সেগুলো প্রয়োগ করে। তাই শিশুদের সামনে কথায়, অন্যের সাথে ব্যবহারে সতর্ক ও সংযত হোন।

১৪। সন্তানের উপস্থিতিতে টিভিতে, টেবে কিংবা মোবাইলে এমন কিছু দেখবেন না,যেটি তার জন্য অস্বস্তিকর বা তার বয়সের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন নয়। সে যেন মোবাইলে বা টিভিতে এমন কিছু দেখার সুযোগ না পায়, সেটি খেয়াল রাখুন। 

১৫। সন্তানের সামনে প্রিয় মানুষের সাথে অন্তরঙ্গ হবেন না। এটি ও তার জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। 

১৬। সবার সামনে তাকে লজ্জা দেবেন না, তাকে ছোট করে কিছু বলবেন না, তার দূর্বলতা প্রকাশ করবেন না। বরং প্রশংসা করুন, তার ছোট কোন কাজের জন্য হলে ও।    

১৭।  নিজের ভাই বোনের সাথে তাকে তুলনা করবেন না, এমনকি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেও না। এতে তাদের মনের উপর চাপ পড়ে। মনে মনে ভেবে নেয় যে, “আমি কিছুই পারি না”। তাতে সে হীনমন্যতায় ভোগে। নিজেকে গুটিয়ে রাখে ও কোন কাজেই মন বসাতে পারে না।

১৮। খুব সমস্যা না হলে, সন্তানদের মিথ্যা বলবেন না, তাদের সাথে মিথ্যা শপথ করবেন না। বিষয়টি তার জানার উপযুক্ত না হলে, “জানি নাবাবড় হয়ে নিজেই জানতে পারবে”—ইত্যাদি বলতে পারেন।  


মাতা-পিতা উভয়কেই মনে রাখতে হবে যে তাঁরাই হচ্ছেন শিশুর আদর্শ, যাঁকে দেখে শিশু অনুকরণ করবে ও নিজের জীবনে সেটা বাস্তবায়িত করবে। আর ভবিষ্যতে আপনার সন্তান যেন আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, অনুগত হয়, সেই ভিত বাবা মা'কেই গড়ে তুলতে হবে।


কোন মন্তব্য নেই

If you have any doubts please let me know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.