বাচ্চা যথেষ্ঠ দুধ না পেলে | Breastfeeding tips
শিশুর জন্য মায়ের দুধের চেয়ে ভাল খাবার কিছু হতে পারে না। যে-সব শিশু মায়ের দুধ খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। অনেক সময় শিশু মায়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ পায় না। এখানে প্রাকৃতিক উপায়ে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির কিছু কৌশল বর্নিত হল।
কেনঃ
১।উদ্বেগ, পারিবারিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা, ভয়ভীতি এবং কুসংস্কারের কারণে বুকের দুধ তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে
পারে।
২।মায়ের
অনিয়মিত ঘুম বা অনিদ্রা ও একটি বড় কারণ।
৩।কোনো অসুখ
বা কিছু ওষুধের কারণেও
বুকের দুধ কমে যেতে পারে।
৪। বাচ্চাকে বার বার ফিডারে দুধ দেয়া হলে শিশু খুব আরামে দুধটা খেতে পারে কারন ফিডারে
অল্প চাপে বেশি দুধ পায়। কিন্তু মায়ের দুধ পেতে বাচ্চাকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এজন্য
সে আর মায়ের স্তন মুখে নিতে চায় না।
৫।মা
অপুষ্টিতে ভুগলে,পুষ্টিকর
খাবার না খেলে স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চা দুধ পাবে না।
৬।বাচ্চা জন্মের সময় মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরন মায়ের বুকের দুধ কম হবার পিছনে বিশেষ একটি কারণ।
৭। বাচ্চার জন্মের সময় প্রি-ম্যাচুউর হলে মায়ের স্তনের গ্রন্থি ও কোষের বিকাশে বাধা পায় ফলে বুকের দুধ কম হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৮। সঠিক উপায়ে বাচ্চাকে না খাওয়ালে (breastfeeding position) ও বাচ্চা দুধ কম পেতে পারে।
৯। আগে ব্রেষ্ট সার্জারী হয়ে থাকলে, সেটি ও দুধ
কম হওয়ার কারন হতে পারে।
কি করবেনঃ শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর কিছু নিয়ম পালন করলে মায়ের দুধ কমে যাওয়ার কোন ভয় থাকে না এবং বাচ্চা ও চাহিদামত বুকের দুধ খেতে পারবে।
১।খেয়াল করুন দুধ গিলে ফেলার শব্দ হচ্ছে কি না বা মুখের ভেতর দুধ দেখা যাচ্ছে কি না। শিশু ঘুমিয়ে পড়লে কানের পেছনে বা পায়ের নিচে সুড়সুড়ি দিয়ে জাগাবেন।যথেষ্ট দুধ তৈরি করতে হলে দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ বার দুধ দিতে হবে।
২।শিশু যত দুধ টানবে তত বেশি দুধ উৎপাদিত হবে। বুকের দুধ তৈরির একমাত্র উদ্দীপক হল
শিশুর দুধ টানা। যতবার শিশু চায়, ততবারই দুধ দিতে হবে।
৩। মায়ের (breastfeeding mom) মনে যদি খুশি না থাকে তবে “অ্যাডিনাইন” নামের হরমোন নিসৃত হয় তাঁর দেহে, যার ফলে দুধের প্রবাহ কমে যায়। তাই মাকে অনেক বেশি হাসি খুশি থাকতে হবে। পরিবারের সবার দায়িত্ব যেকোন উপায়ে মাকে আনন্দে রাখা।
৪।দুই স্তন থেকেই শিশুকে পর্যায়ক্রমে দুধ খাওয়াতে হবে। কারন,একদিকের স্তন থেকে দুধ খেয়ে শিশু অভ্যস্ত হয়ে পড়লে,অপরদিকে স্তন থেকে কম বা না খাওয়ানোর ফলে সেটিতে দুধ তৈরি ও সরবরাহ ব্যাহত হয়।তবে খুব ঘন ঘন স্তন পরিবর্তন করবেন না। একটি স্তন অন্তত ১৫ মিনিট খাওয়াবেন।
৫।যখনই দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকবে তখনই বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। বাচ্চাকে দিনে তিন ঘন্টা এবং রাতে চার ঘন্টা পরপর দুধ খেতে দিতে চেষ্টা করুন। দুধ যত বেশি খাওয়াবেন,দুধ ও তৈরী হবে তত বেশি।
৬। বাচ্চা যথেষ্ঠ দুধ না পেলে ও বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করবেন না। দরকার হলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
৭।মা যেন যথেষ্ঠ বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পান সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। দৈনিক অন্তত নয় ঘণ্টা ঘুম মায়ের জন্য জরুরী।
কিছু ঘরোয়া টিপসঃ বুকের দুধের
পরিমাণ বৃদ্ধির
জন্য কয়েকটি
প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায় আছে। আপনি এগুলো চেষ্টা করতে পারেন।
১।এক গ্লাস
গরম দুধের সাথে এক চামচ
জিরা গুঁড়া
মিশিয়ে প্রতি রাতে
ঘুমানোর আগে পান করলে
বুকের দুধ বৃদ্ধি
পাবে।
২। মেথিতে
আছে ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন
এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে যা মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে।তাছাড়া
এই বীজে প্রিকারসর নামে এক ধরনের হরমোন
আছে যা দুধের উৎপাদন বাড়াতে পারে।মেথি
চা,সাপ্লিমেন্ট বা ক্যাপসুল আকারে খেতে পারেন।
৩।প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা ভালো করে গুড়া করে দুধের সাথে মিশিয়ে খাবেন।
৪। প্রতিদিন ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুন। প্রাকৃতিকভাবে বুকের দুধ বৃদ্ধি এটি সহজতম উপায়।
৫। ভিটামিন কে
সমৃদ্ধ তুলসি পাতা মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। চা বা স্যুপের সাথে ব্যবহার করতে পারেন তুলসি পাতা । কোষ্ঠকাঠিন্যে ও উপকারী এই
পাতা।
৬।এক গ্লাস গরম দুধের সাথে পরিমান
মত দারুচিনি গুঁড়া করে মিশিয়ে পান করুন। এটি বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। তবে
প্রতিদিন পান করতে হবে।
৭।আপনার স্তনে দুধের পরিমাণ বাড়াতে
তরকারিতে গরম মসলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন। এটি গবেষণায় প্রমানিত যে,গরম মসলা দুধের উৎপাদন
বাড়াতে উদ্দীপনা যোগাতে পারে। গোলমরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে বীজ, জিরা বীজ,
মৌরি বীজ, জায়ফল ও তেজপাতা দিয়ে গরম মসলা তৈরি করতে পারেন ঘরেই।
৮।তাজা ফল, শাকসবজি,সালাদ,গাজর, শিম, বাদাম (চীনাবাদাম, কাজুবাদাম), কালোজিরার ভর্তা, লাউ, ডুমুর, পালংশাক, কলমিশাক, টমেটো প্রভৃতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সরাসরি সহযোগিতা করে ।
৯। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় জন্মনিরোধক বড়ি
খাওয়া ঠিক নয়। এতে বুকের দুধ কমে যেতে পারে।
১০। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৩ কোয়া রসুন খেতে পারেন। এটিও আপনার বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
জেনে রাখুনঃ
১। আপনার বাচ্চাকে অবশ্যই ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াবেন (breastfeeding how many months) এক ফোঁটা পানিও না।
২।মনে রাখবেন শিশু দুধ খেলেই আবার দুধ তৈরি হয়।দুধ জমিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। তাই শিশুকে বার বার মায়ের দুধ খাওয়ানো দরকার।
৩।একটি শিশু দিনে একটু একটু করে সাতবার পর্যন্ত মলত্যাগ করতে পারে। এটি স্বাভাবিক। আবার কোন শিশু এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত একদম মলত্যাগ নাও করতে পারে। এতেও বেশি ভয়ের কিছু নেই।
৪।প্রথম দিকে বাচ্চা কে অল্প অল্প বিরতি দিয়ে একটু পর পর দুধ খাওয়াতে হবে যাতে বাচ্চার খুব বেশি ক্ষুধা না আর সে ধীরে ধীরে দুধ পান করে।
৫। শিশুর মুখে বোতল বা চুষনী দেওয়া উচিত নয়। এর ফলে শিশু তার মায়ের স্তনের বোঁটা মুখে নিতে চাইবে না।

কোন মন্তব্য নেই
If you have any doubts please let me know