পিঠের ব্যথা | back pain causes
পিঠ ব্যথা মানেই মারাত্মক কিছু নয়। শারীরিক পরিবর্তন, আঘাত, পিঠের কোন অংশের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে পিঠে ব্যাথা হতে পারে।
কেন হয়ঃ (back pain causes) পিঠের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এমনকি ছোটখাট দৈনন্দিন অভ্যাসের জন্যও ব্যথা হতে পারে।
১।অতিরিক্ত ওজন বহনকরা-পিঠ ব্যথার বড় কারন। নিয়মিত বেশী ওজন বহন করলে কাঁধের ভারসাম্যতা নষ্ট হয়ে যায়,যার ফলে ব্যথার সৃষ্টি হয়। এ জন্য শরীরের এক পাশে ওজন বহন না করে দুই পাশেই ওজন ভাগ করে বহন করা উচিত।
২।চেয়ারের ওপর সামনে ঝুকে বসলে বুকের মাসেলে চাপ পড়ে। এভাবে লম্বা সময় ধরে বসার ফলে পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এজন্য পিঠ সোজা করে,অর্থাৎ ৯০ ডিগ্রি কোণ করে বসতে হবে।
৩।দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, নিঃসঙ্গতা, হীনমন্যতা পিঠ ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে।
৪।উঁচু হিলের জুতা পরলে মেরুদন্ডে চাপ সৃষ্টি হয় যার ফলে পিঠ ব্যথার কারণ হতে পারে। এতে শরীরের ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয়এবং ব্যথার সৃষ্টি করে।
৫।কুঁজো হয়ে দীর্ঘ দিন মোটরসাইকেল চালালে পিঠে ব্যথা হতে পারে। তাই পিঠ সোজা করে চালানোর অভ্যাস করা উচিত।
৬।বিছানার তোশকের
ভারসাম্য ঠিক না থাকলে ও পিঠের ব্যথা হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে তোশক যেন বেশী
শক্ত বা বেশী নরম না হয়। তাই প্রতি ৬/৭ বছর অন্তর বিছানার
তোশক পরিবর্তন করা উচিত।
৭। যথেষ্ঠ পুষ্টির অভাব,অনিয়ন্ত্রিত জীবন,অতিরিক্ত কাজের চাপ, স্বাস্থ্যের ব্যপারে উদাসীনতা প্রভৃতি কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
কি কি জটিলতা হতে পারেঃ নিম্নে উল্লেখিত প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার দেরী না
করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
১।দ্রুত,ওজন কমতে থাকলে আর সাথে পিঠ ব্যথা থাকলে, এটি
মেরুদণ্ডে টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।
২।পিঠ
ব্যথার সাথে প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ইনফেকশন
বা টিউমারের লক্ষন।
৩।স্পাইনাল
কর্ড কোন কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনার পিঠ ব্যথা ও অসাড়তা (বিশেষ করে পায়ে) অনুভূত
হতে পারে। যেটি পরে প্যারালাইসিসের দিকে ধাবিত হতে পারে।
৪।যদি
প্রতিনিয়ত পিঠের ব্যথা হয় আর ব্যথার সঙ্গে ক্ষুধা মন্দা, জ্বর অথবা
দুর্বলতা বা অসাড়তা থাকে,তবে এটি টিউমারের লক্ষন হতে পারে।
৫।আপনার
অস্টিওপোরোসিস আছে এবং যদি হঠাৎ পিঠ ব্যথা অনুভব করেন,তাহলে আপনার কশেরুকাতে ফ্র্যাকচার হয়ে থাকতে পারে।
৬।যে কোন দূর্ঘটনায় ফুসফুস ছিদ্র হয়ে
গেলে ও উপরের পিঠে ব্যথা হতে পারে। আর ব্যথার সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট হয় তবে এটি গুরুতর
লক্ষন।
৭।পিঠের উপরের অংশ অথবা ঘাড়ে ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের (back pain heart attack) ইঙ্গিত হতে পারে।
খেয়াল করুন পিঠ ব্যথার সাথে বমিভাব, শ্বাসকষ্ট,হাত বা চোয়াল ব্যথা, অত্যধিক
ক্লান্তি, মাথা ঘোরানো বা বুকে ব্যথা—এই উপসর্গ গুলো থাকলে অবিলম্বে চিকিৎসক
দেখিয়ে নিন।
৮।অনেক দিন ধরে,ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রনে
না থাকলে বুকের মধ্য বরাবর রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে পিঠের উপরের অংশে ব্যথা হতে পারে।
৯।যে কোন কারনে মেরুদণ্ডের অস্থিসন্ধির কোন হাড় তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে গেলে নার্ভ বা স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে, যার ফলে পিঠে ব্যথা হয়।
ঘরোয়া টোটকাঃ
১।সকালে খালি পেটে দুই তিন কোয়া রসুন খেতে পারেন নিয়মিত। তাছাড়া রসুনের তেল মালিশ করলে ও আরাম পাবেন।
২।শক্ত কোনো বিছানায় বা মেঝেতে মাদুর বা ম্যাট বিছিয়ে টান টান হয়ে শুয়ে থাকুন। প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে এটি করুন।
৩।দিনে দুই,তিনবার তোয়ালেতে বরফ মুড়িয়ে ব্যাথার স্থানে লাগাতে পারেন। ব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি পাবেন ।
৪।ব্যথানাশক ক্রীম বা জেল লাগাতে পারেন। পেইন কিলার যত কম খাবেন তত ভালো।
৫।শরীরচর্চা মেরুদণ্ড ও ব্যাকপেইনের জন্য সবচেয়ে ভালো। এটি দৌড়নো, জগিং কিংবা শ্রেফ হাঁটা হতে পারে।
৬।গরম পানির সেঁক শরীরে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে ও ব্যথা প্রশমিত করে। ব্যথার ওষুধের চেয়ে গরম সেঁক বেশি উপকারী। ব্যাগের তাপমাত্রা যেন ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশী না হয়।
৭।কুসুম গরম পানিতে ইপসাম লবন মিশিয়ে গোসল করলে পিঠ ব্যাথা অনেকটা কমে যায়। তবে এক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রার ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৮।হলুদের সাথে দুধ ও হলুদ মিশিয়ে পান করুন। শরীরের যেকোন ব্যথা সারাতে অনেকটা কার্যকরী এই মিশ্রন।
ব্যথা প্রতিকারের কিছু কৌশলঃ
১। সবসময় সোজা হয়ে দাঁড়ান। পেটের মাসল যেন টানটান থাকে।এই অভ্যাস আপনার ব্যাক পেইনের সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করবে।
২।নিষ্ক্রিয়তা (কোন কাজ না করে বসে বা শুয়ে থাকা) স্থূলতার ও পিঠের ব্যথার বড় কারন। নিজেকে সক্রিয় রাখুন।নিয়মিত হাঁটুন,ঘরের কাজ বা অন্য শারীরিক পরিশ্রম করুন। এতে ব্যথা পালাবে আর মন ও ভালো থাকবে।
৩। শরীরের ওজন যে কোন ভাবেই হোক নিয়ন্ত্রনে রাখুন।
৪।আপনার হাড়কে সুস্থ রাখতে, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে খাবারে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম নিয়মিত রাখুন,বিশেষ করে ৪০’ এর পরে।
৫।অফিসে বাঁ বাসায় টানা
অনেকক্ষণ একইভাবে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না ।মাঝে মাঝে ১ মিনিটের জন্য হলেও বিশ্রাম
নিন।
৬।ভিটামিনের
অভাবে মেরুদণ্ডের হাড় দুর্বল হয়ে যায়। ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি
অ্যাসিড সমৃদ্ধ ডিম, দুধ, কলা, আলু নিয়মিত খান। তাছাড়া বাদাম, সবুজ চা, আদা, চেরি ফল এগুলো পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শিশুদেরও এসব
খেতে উৎসাহিত করুন। ভাজাপোড়া খাবার, মাখন বা অন্যান্য চর্বি সমৃদ্ধ খাবার পিঠের ব্যথার কারন। এগুলো হার্টের জন্যও হানিকর।
৭। সকালে ঘুম
ভাঙার পর সোজা উঠবেন না। বরং পাশ ফিরে উঠুন। তারপর পিঠ সোজা রেখে উঠে দাঁড়ান।
৮।অধিক রাতজাগা
বা অনিয়মত ঘুম ছেড়ে দিন। প্রতিদিন প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা
নিয়ম করে ঘুমান। উপুড় হয়ে ঘুমাবেন না।
৯।পিঠ
ব্যথা থাকলে, অফিসে কাজের সময় পায়ের নিচে একটি ছোট পিঁড়ি রাখলে উপকার পাবেন। এতে পিঠের নিচের দিকে চাপ কমে এবং পিঠের ব্যথার উপশম হয়।
তবে অবশ্যই সোজা হয়ে বসবেন।
১০।শিশুরা পড়ার টেবিলে যেন সোজা
হয়ে বসে,পিঠ বাকা করে বা ঝুঁকে না বসে—এই শিক্ষা দিন প্রথম থেকেই।
১১।মেডিটেশন বা
ধ্যান চর্চায় ব্যাকপেইন ও মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে পারে। মেডিটেশনের ফলে
শরীরের মাংসপেশীগুলো শিথিল হয়।তাছাড়া অ্যাকুপাংচার বা অ্যাকুপ্রেসার চিকিৎসাও ব্যথা উপশমে কার্যকরী প্রমানিত
হয়েছে।
কি করবেন নাঃ
১।
অতিরিক্ত মাংস খাবেন না।
২।ধূমপান মেরুদণ্ডের দিকে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়, ফলে পিঠ
ব্যথা সহজেই শরীরে চেপে বসে।
৩।ঝাড়ু দেওয়ার সময়
ঝাড়ু ছোট ব্যবহার করুন যাতে ঝুঁকতে না হয়। এতে কোমর ও মেরুদণ্ডে চাপ পড়বে না।
৪।বালিশের
জন্যও পিঠে ব্যথা হয়। খুব বেশি উঁচু বালিশ ব্যবহার করবেন না ।

কোন মন্তব্য নেই
If you have any doubts please let me know