শিশুর চোখের জ্যোতি ভালো করার কৌশল | how to improve eyesight
শরীরের অন্যতম প্রধানতম অঙ্গ হল চোখ।চোখের যত্ন নেওয়া এজন্য খুবই জরুরি। ঠিক মত চোখের যত্ন না নিলে চোখের পাওয়ার বেড়ে যাওয়া,চোখ শুকিয়ে যাওয়া, গ্লুকোমা, রাতকানা রোগ ইত্যাদি রোগ হতে পারে। তাই শিশুদের চোখের সার্বিক পরিচর্যায় সচেতন হওয়া দরকার।
কেন চোখের সমস্যা হয়ঃ
১। দীর্ঘ সময় ধরে টেলিভিশন, কম্পিউটার বা মোবাইলে চোখ রাখলে চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে,চোখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এমনকি শিশুর দূরের বস্তু দেখতে অসুবিধা হতে পারে।
২। জন্ম থেকেই শিশুর চোখের কোন ত্রুটি থাকতে পারে।
৩। অপরিণত বয়সে জন্ম হলে। বিশেষ করে যেসব শিশুর জন্মের পর লম্বা সময় ধরে অক্সিজেন দিতে হয়, তাদের চোখের রেটিনায় জটিল সমস্যা হতে পারে। এটি অনেক শিশুর অন্ধত্বের বড় কারণ।
৪। বাচ্চার চোখে ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে এবং সেটির সময়মত চিকিৎসা না করালে।
৫।অনেকদিন ধরে শিশুর ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতি থাকলে দৃষ্টিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি শিশু অন্ধ ও হয়ে যেতে পারে।
চোখের যত্নে করণীয়:
১।শিশুর ৬ মাস বয়স থেকে ৫ বছর পর্যন্ত প্রতি ৬ মাস পরপর ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে।
২। নবজাতকের চোখের কোনো সমস্যা আছে কি না, তা পরীক্ষা করান,বিশেষ করে মায়ের যদি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অথবা সংক্রমণের ইতিহাস থাকে।
৩।জন্মের পরপরই শিশু যেন শালদুধ পায়,
সাথে সাথে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ দিয়ে যেতে হবে,এমনকি বাচ্চার অসুখ-বিসুখে ও দুধ বন্ধ করা
যাবেনা।
৪।বাচ্চাদের বাইরের রোদে খেলাধুলা করার সুযোগ দিন নিয়মিত। কারন, সূর্যের আলোয় দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকবে।
৫।শিশুর বয়স ৬ মাস হয়ে গেলে সবুজ শাকসবজি, গাজর, পালংশাক, মিষ্টিকুমড়া, ছোট মাছ, ইত্যাদি নরম করে খেতে দিন।
৬।শিশু যখন কোন কাজ করে বা পড়ালিখা করে, সে যেন পর্যাপ্ত আলোতে করে, তাতে চোখের
পরিশ্রম অনেক হয়।কম আলোতে টিভি দেখা বা অন্য কোন কাজ করা একদম ঠিক নয়। তেমনি অতিরিক্ত আলোতে কাজ করাও চোখের জন্য ক্ষতিকর।
৭।প্রখর রোদে আল্ট্রা ভায়লেট রশ্মি চোখের ক্ষতি সাধন করতে পারে। বেশী রোদে তাই বাচ্চার চোখে সানগ্লাস বা ফটোসান গ্লাস দিন।
৮।শিশু চোখব্যথা বা মাথাব্যথা করলে,দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করান।দেরী করবেন না।
৯।একনাগাড়ে অনেক সময় আপনার সন্তান যেন টেলিভিশন, কম্পিউটার বা মোবাইল না দেখে,সেটি
নিশ্চিত করুন।প্রয়োজনে সময় বেধে দিন, যেমন শুধু মাত্র খাবার সময় দেখবে বা পড়া শেষে
দেখবে ইত্যাদি।
১০।চোখে টান অনুভব করলে দুটি হাতের তালু ঘষে
গরম করে ৩০ সেকেন্ড মতো চোখের পাতা বন্ধ করে তার উপর চেপে ধরুন। এটি একটি
ইনস্ট্যান্ট টোটকা।
১১।রাতে ঘুমানোর আগে পায়ের তলায় সরষের তেল
দিয়ে ম্যাসাজ করুন। নিয়মিত করলে দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকবে।
কি করবেন নাঃ
১। কখন ও ঘর অন্ধকার করে টিভি বা মোবাইল
দেখবেন না। বাচ্চাকে ও এটি বুঝিয়ে দিন। কারন এর ফলে চোখের পেশীর উপর চাপ পড়ে ও চোখের
রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২। বাচ্চাদের চোখে সুরমা বা কাজল দেবেন না।
চোখ ভালো রাখার
খাবার (better eyesight food)
১।কমলাতে থাকা ভিটামিন ‘সি’, চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত কমলা খেলে দৃষ্টি
শক্তি সহজে দূর্বল হবে না।
২। গাজর চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।এটি চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং
ছানি পড়া থেকে রক্ষা করে। গাজরে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ এবং বিটা ক্যারোটিন, যা চোখের ইনফেকশন
প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ও রাতকানা রোগ হতে রক্ষা করে।
৩।মুরগির মাংসের জিঙ্ক
এবং ভিটামিন ‘বি’;
যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে মুরগী যেন প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠা
ও দেশী হয়। ফার্মের মুরগী নয়। আর গরুর মাংসে জিঙ্ক থাকে আরো বেশী।
৪।চোখের
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ডিম ও বেশ কার্যকর।ডিমের
কুসুমে
থাকা লিউটেইন ও
জিংক রেটিনার ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সক্ষম আর ভিটামিন ‘এ’ কর্নিয়াকে সুরক্ষিত রাখে।আপনার বাচ্চার চোখের নিরাপত্তার জন্য তার
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তত একটি করে ডিম রাখুন ।
৫।টমেটোতে রয়েছে আঁশ,
খনিজ ও ক্যারোটিন এবুং লাইকোপিনা। অধিক আলোতে চোখকে সুরক্ষিত রাখে টমেটো।
৬।
মাছে
রয়েছে প্রচুর ওমেগা৩ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড। বিশেষ করে ছোট মাছ,স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকরেল, টুনা ও কড মাছ চোখ ভালো রাখার জন্য আপনার বাচ্চাকে
দিতে পারেন। চোখের শুষ্কতা কমাতে দারুন ভূমিকা রাখে মাছ।
৭।পালংশাকে আছে প্রচুর ভিটামিন এ ও আয়রন যা চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই শাকে আছে জিয়ানথিন ও লুটেইন, যা ক্ষতিকর নীল রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচায়।
৮।পেঁপে অসাধারন গুন সম্পন্ন একটি ফল। পেঁপেতে আছে ক্যারোটিনয়েডস নামের উপাদান, যা চোখের জন্য বিশেষ উপকারী। এ ছাড়া পেপের মধ্যে থাকা বিটা ক্যারোটিন, জিয়াক্সনাথিন ও লুটেইন চোখের মিউকাস মেমব্রেনকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৯। এক চামচ মধুর সাথে
এক চিমটি মরিচের গুড়া মিশিয়ে দিনে প্রতিদিন একবার খান। উপকার পাবেন নিয়মিত খেলে।
১০।ভিটামিন
‘সি’ তে ভরপুর বাঁধাকপি।এটি চোখের জন্য খুব ভালো একটি সবজি।
১১।বাদাম
বা বাদাম জাতীয় খাবার যেমন সূর্যমুখী বীজ, চিনাবাদাম—এগুলো
ভিটামিন ই-এর দারুন
উৎস।বয়স হয়ে গেলে এই ভিটামিন ই চোখের সমস্যা, ছানি পড়া ইত্যাদি থেকে বাঁচায়।
১২।রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ মধুর
সাথে ২/৩ টা এলাচ গুড়া করে দুধ সহ খান। প্রতি রাতে খেলে দৃষ্টিশক্তি ভাল হবে।
১৩। আমলা জুসে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন- সি, যা চোখের জ্যোতি বাড়ায়।
১৪। ভূট্টাতে প্রচুর পরিমাণ লুটেইন এবং
জিয়াক্সেনথিন রয়েছে। এই দুটি উপাদান শরীরের জন্য খুবই উপকারী । তাই ভুট্টা নিয়মিত
খেলে চোখের উন্নতি ঘটবে।
১৫। ভিটামিন “এ” এর কিছু উৎসঃ গাজর, ভুট্টা, আপেল, টমেটো, পাকা আম, পাকা পেঁপে, রাঙা আলু, মিষ্টিকুমড়া, ক্যাপসিকাম (লাল, হলুদ বা সবুজ), সবুজ শাকসবজি যেমন পালংশাক, শজনেপাতা, লেটুসপাতা, বাঁধাকপি ইত্যাদি।

কোন মন্তব্য নেই
If you have any doubts please let me know