ক্লিক করুন এখানে

শিশুর ঘামাচি | skin rash with itching

ঘাম থেকেই ঘামাচি হয়।শরীরের যেসব জায়গার ঘাম সহজে শুকিয়ে যায় না, বেশ কিছুক্ষণ ত্বকেই থাকে সেসব স্থানে ছোট ছোট, লালচে র‍্যাশ দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কপাল, পিঠ কিংবা বুকে ঘামাচি বেশি হয়।

 

লক্ষন কিঃ

১।গরমে ঘামাচি বেশি হলেও শীতকালেও শিশুদের ঘামাচি (skin rash) হতে পারে। আঁটসাঁট জামা বা শীত নিবারনে অত্যাধিক গরম কাপড় পরালে ঘামাচি হতে পারে।

২। শিশুর শরীর চুলকানি,অস্বস্তি ও অনবরত কান্না করতে পারে। খাবারে অরুচি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে।

  

কি কি জটিলতা হতে পারেঃ 

১। বেশী চুলকানোর কারনে বাচ্চার ফুসকুড়ি (skin rash with allergy) লাল হয়ে ফুলে যাবে এবং ব্যথা ও হতে পারে।

২। পুঁজ তৈরি হবে।

৩। জ্বর আসা।

৪। চুলকাতে চুলকাতে ঘামাচিতে (skin rash that itches) ইনফেকশন হয়ে একজিমার আকার ধারণ করতে পারে।

৫। অনেক সময় ঘামাচি বড় হয়ে ফোঁড়ায় রূপান্তরিত হয় ও অনেক ব্যথা হবে।



 কি করবেনঃ 

 যেসব শিশু বেশী ঘামে সেই ঘাম আবার গায়ে শুকিয়ে যায়, তাদের ঠাণ্ডা লাগে বেশীতাই গায়ের জামা ঘামে ভিজলে সাথে সাথে বদলে দিন ভালো ভাবে ঘাম মুছে দিন 

২।গরমকালে প্রতিদিন শিশুকে গোসল করান।তবে ঘাম শরীরে সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি দিলেও ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে, তাই ঘাম মুছে একটু জিরিয়ে তারপর গোসল করান।তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছতে সাবধানতা অবলম্বন করুন যাতে ঘামাচিতে ঘষা না লাগে। আর গরমে একই পোশাক শিশুকে বেশিক্ষণ পরিয়ে রাখা উচিত নয়

৩।গরমে শিশুদের চুলের গোড়াও খুব ঘামে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চুলের গোড়া ভালো করে মুছে দিন

৪।ছোট বাচ্চাদের গরমে মাথা ন্যাড়া করতে পারেন, এতে মাথায় ঘামাচি, খুশকিসহ নানা রকম চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। 

৫। শিশুকে বেশি বেশি পানি পান করাতে হবে। পানি না খেলে ঘরে তৈরি জুস দিতে পারেন। কিন্তু কোমল পানীয় একদম নয়। রসালো মৌসুমি ফল দিতে পারেন

৬।গোসলে সাবান ব্যবহার করতে পারেন। তবে চুলে শ্যাম্পু দিন একদিন পর পর

৭।শিশুকে খোলামেলা জায়গায় ঠান্ডা পরিবেশে রাখুন। ঘরে এয়ারকন্ডিশনার থাকলে ভালো, তবে ফ্যানের বাতাসও উপকারী। এতে ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে

৮।শিশুকে হালকা সুতির কাপড় পরান।স্কুল ড্রেস প্রতিদিন ধোয়া জরুরি

৯।গরমে জরুরি দরকার ছাড়া বাচ্চাদের বাড়ির বাইরে কিংবা ধুলাবালি,যানজটপূর্ণ রাস্তায় না নিয়ে যাওয়াই ভালো

১০।ঘামাচি খুব বেড়ে গেলে বা ইনফেকশন (skin rash with allergy) হয়ে গেলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন

 

কি করবেন নাঃ

১। ঘামাচিতে নখ লাগাবেন না। চুলকালে,হাতের নখ কিংবা আশপাশের ধুলাবালি থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়ে পুঁজ হতে পারে। জ্বরও আসতে পারে। 

২।বাচ্চাকে গরমে তেললোশন  গুলো দেবেন না

৩।গোসলের পানিতে কোনো অ্যান্টিসেপটিক (যেমন ডেটল)দেবেন না। 

৪।গরমকালে শিশুকে ডায়পার কম পরাবেন। কারন ভেজা ডায়পার শিশুর বিরক্তি অস্বস্তির কারণ হতে পারে। ত্বকে ঘামাচি বা ্যাশ হওয়ার ঝুকি থাকে বেশী। 

৫।বেবি পাউডার বা ট্যাল্ককাম পাউডার ঘামাচিতে দিলে সাময়িক আরাম অনুভূত হলেও,এগুলো রোমকূপ বন্ধ করে দেয় ঘামাচি আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেক বেবি পাউডারে অ্যাসবেসটস নামক একটি উপাদান থাকে যেটি ক্যানসার পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে !তাছাড়া এই পাউডারের মিহি গুঁড়া নিশ্বাসের মাধ্যমে  ফুসফুসে গিয়ে নিউমোনিয়া, প্রদাহ এবং শ্বাস-যন্ত্রের অন্যান্য সমস্যা তৈরি করতে পারে

  

কিছু ঘরোয়া টোটকাঃ 

১। ২০০ মিলি গোলাপ জলমধু,কিছু  বেসন  ২০০ মিলি পানি এক সঙ্গে মিশিয়ে ফ্রিজে   রেখে আইস কিউব তৈরী করুন। এক খণ্ড পাতলা নরম কাপড়ে একটি কিউব জড়িয়ে ঘামাচির জায়গায় আলতো করে বোলান। ঘামাচি কমে যাবে। এটি করতে হবে প্রতিদিন কয়েকবার দিনে।  এছাড়া শ্রেফ ঠান্ডা পানি দিয়ে কাজটি করতে পারেন। 

২।লেবুতে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল উপাদান। খুব বেশি ঘামাচি হলে,দিনে তিন-চার বার এক গ্লাস করে লেবুর শরবত দিন বাচ্চাকে। 

৩। নিমপাতা বেটে অথবা নিমপাতা ভেজানো পানি ব্যবহার করতে পারেন ঘামাচিতে। এর অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল উপাদান ঘামাচির ব্যাকটিরিয়াকে দূর্বল করতে পারে। ভালো ফলাফল পাবার জন্যে দিনে - বার এটি করতে পারেন

৪।আলু পাতলা করে কেটে ঘামাচির জায়গার ওপর কাটা আলুগুলো আলতো করে চেপে ধরুন। এভাবে  ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখুন,তারপর ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এটি করতে হবে

৫।অ্যালোভেরার জেল ঘামাচির জ্বালা থেকে নিষ্কৃতি দেবে। অস্বস্তি কেটে যাবে

৬।   কাপ পানিতে  টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে,একটি পরিষ্কার কাপড় এই মিশ্রনে ভিজিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত জায়গায় লাগান

৭। মসুর ডাল বাটার সাথে কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত অংশে লাগান। ঘামাচি সারবে,চুলকানিও কমবে  

৮।- চামচ গোলাপজল,- চামচ মুলতানি মাটি পানির সাথে  মিশিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত জায়গায় পেস্টটি লাগান -  ঘণ্টা এভাবে রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।

৯।সারা রাত ছোলার ডাল পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে বেটে নিন। এখন এই ডাল বাটা ঘামাচির ওপর পনেরো মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ঘামাচি কমে যাবে আস্তে আস্তে,আর সাথে চুলকানিও

  

জেনে রাখুনঃ 

১। শিশুরা ঘেমে গেলে খেয়াল করবেন ঘাম থেকে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে কি না কিংবা অতিরিক্ত ঘামার কারণে পানিশূন্যতা হচ্ছে কি না

২।যেসব শিশু একটু মোটা ধাঁচের তাদের অনেকের ঘাম বেশী হয়।তাদের দেহে বেশি ভাঁজ থাকে বলে সব ভাঁজের মধ্যে ঘাম আর ময়লা বেশি জমতে পারে সহজেই এসব স্থানে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস বাসা বাঁধতে পারে

 







কোন মন্তব্য নেই

If you have any doubts please let me know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.