কিডনী ভালো রাখার কিছু উপায় | Kidney disease treatment
কিডনি মূত্রনালীর অংশ যা রক্তের ফিল্টার হিসেবে কাজ করে এবং যার ফলে তরল বর্জ্য প্রস্রাব হিসেবে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিডনির যেকোন রোগ গুরুতর এবং চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত।
কিডনী রোগের লক্ষন (kidney disease symptoms)
১।শুরুতে খাবারে অনীহা, বমি বমি ভাব, প্রস্রাবের পরিমাণে তারতম্য,ক্লান্তি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আবার অনেক সময় দীর্ঘদিন রোগীর কোনো উপসর্গ দেখা যায় না।
২।শরীরে, মুখে, পেটে ও পায়ে পানি আসতে পারে।
৩। কিডনি বা কিডনির চারপাশে ব্যথা। জ্বর জ্বর ভাব ।
৪। হঠাৎ করে প্রস্রাবের পরিমাণ অস্বাভাবিক কমে যাওয়া।
১। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি বা তরল খাওয়া উচিত। এতে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।প্রস্রাব যদি হলদেটে বা গাঢ় রং-এর হয় তাহলে পানি খাওয়ার পরিমান বাড়াতে হবে। নিয়মিত কম পানি খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
২।ডায়াবেটিস (kidney disease with diabetes) নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। মনে রাখবেন ডায়ালিসিস রোগীদের ৩০ শতাংশ হল ডায়াবেটিসের রোগী৷
৩।কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া বন্ধ করুন।
৪।যে কোন মাংস (যেমন গরুর মাংস),অতিরিক্ত প্রোটিন,চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডলস,লবণ দিয়ে ভাজা বাদাম, টেষ্টিং সল্ট ইত্যাদি কিডনির ওপর চাপ ফেলে ও কিডনির কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার ঝুকি থাকে।
৫।প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশংকা থাকে। তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা তার চেয়ে কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।
৬। প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি, কিংবা জগিং,খেলাধুলা, হাঁটাচলা,হালকা এক্সারসাইজ করলে ডায়াবেটিস,ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে থাকবে ও সে সাথে কিডনি ও ভালো থাকবে।
৭।দীর্ঘমেয়াদী হাই ব্লাড প্রেসার,ব্লাড ভেসেলগুলোর ক্ষতি করতে পারে৷ফলে কিডনি সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তাই রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন। দরকার পড়লে ওষুধ খেতে হবে৷
৮।ধূমপান বা মদ্যপান কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার অন্যতম কারন। সেই সাথে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায় এই দুই অভ্যাসের কারনে। তাই এগুলোর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিহার করুন।
৯। ফলমূল,সবুজ শাকসবজি, ফাইবার জাতীয় শস্য ইত্যাদি বেশী বেশী খান। বেশিরভাগ শাকসবজিতে ভিটামিন সি, কে, ফাইবার ও
ফলিক এসিড থাকে। এগুলো রক্তচাপ কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং কিডনি জটিলতা কমায়।
১০।কোমল পানীয় বা দোকানে তৈরী জুস কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন, বরং বেশী করে পানি পান করুন।
১১।ওজন যে কোন উপায়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারন অতিরিক্ত ওজন ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় যা কিডনি রোগের অন্যতম মূল কারণ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারনে রক্তে সুগার বেড়ে গেলে ও তা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিমিত খাবার খান ও ওজন ঠিক রাখুন।
১২।ডায়রিয়া, বমি, রক্ত আমাশয়, পানিশূন্যতায় আক্রান্ত রোগীর দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। কারণ, এসব রোগ থেকেও কিডনি বিকল হতে পারে।
১৩। প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।
উপকারী কিছু খাবারঃ
১।রান্নায় অন্যান্য তেলের চেয়ে অলিভ অয়েল বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে অ্যান্টি
ইনফ্লামেটরি ফ্যাটি এসিড আছে যা কিডনি সুস্থ রাখে, এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধ ও ভূমিকা
রাখে।
২।হলুদে থাকা কারকুমিনে
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা কিডনি রোগ ও পাথর জমা হওয়া রোধ করে। তাছাড়া
হলুদ ত্বকের জন্য অনেক ভালো। আর নিয়মিত হলুদ খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
৩।মৌসুমি ফল খেতে
হবে।বিশেষ করে,আপেলে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি
উপাদান,যা কোলেস্টেরল দূর করে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়া এটি
ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। আপেল কাঁচা বা জুস হিসেবে ও খেতে পারেন।
৪।আদা কিডনিতে রক্তের চলাচল বাড়িয়ে দেয়। যদি
নিয়মিত কাঁচা আদা (লবন ছাড়া) বা জুস করে ও খেতে পারেন।
৫। বাঁধাকপিতে আছে ভিটামিন বি৬, সি, কে, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড।
এটি কিডনির কার্যকারিতাকে উন্নত করে।
৬। লেবু মেশানো পানি ও কিডনি পরিষ্কার করতে
পারে, তবে খেতে হবে প্রতিদিন সকালে। লেবু বা কমলাতে সিট্রেট নামের
উপাদান থাকে যা পাথর বেড়ে ওঠা রোধ করে।
৭।ডিমের সাদা অংশে প্রচুর প্রোটিন,ফসফরাস ও
অ্যামিনো এসিড আছে যা কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে কিডনি সুস্থ রাখে।
৮। রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল
কমাতে কার্যকরী। সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া সবচেয়ে ভালো। এটি
হার্ট ভাল রাখার পাশাপাশি কিডনিকেও সুস্থ রাখবে।তবে রান্না করে খেলে এই উপকার
পাবেন না।
৯।দারুচিনি রক্তে থাকা শর্করার মাত্রা
কমাতে কাজ করে, সেই সাথে কার্যকরী কিডনীর কর্ম দক্ষতায় উন্নতি ঘটায়।
১০।মাছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি
অ্যাসিড আছে যা প্রোটিনের চাহিদা পূরনের সাথে সাথে কিডনিকে ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
১১।আদা চা’ সর্দি কাশি ছাড়া ও কিডনি রোগের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে পারে। আদা,
মধুর সাথে ও খেতে পারেন। রক্তের কোলেস্টেরল কমবে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে দারুন কাজ
করে আদা।
১২।পেঁয়াজ ও কিডনির জন্য অনেক উপকারী। এতে
আছে প্রচুর পরিমাণ ফ্ল্যাভোনোয়েড, যা রক্তের ফ্যাট দূর করতে পারে।
১৩।এক মুঠো ধনেপাতা কুচি কুচি করে কেটে ২/৩ গ্লাস পানির সাথে একটি পাত্রে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন।ঠান্ডা
হলে পানীয়টি ছেঁকে পান করুন। প্রতিদিন
সকালে খালি পেটে এই মিশ্রনটি পান করতে হবে। তবে খাওয়ার আগে হালকা গরম করে খাবেন।
এই পদ্ধতিতে আপনার কিডনি ও রক্ত দুই-ই পরিষ্কার হবে।
১৪।লাল ক্যাপসিকামে পটাশিয়াম আছে যা কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
১৫।ক্যানবেরি
জুস কিডনির সংক্রমণে কিডনির ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং কিডনিতে পাথর তৈরী
প্রতিরোধ করে। নিয়মিত ক্যানবেরি জুস খেলে মূত্রথলির সংক্রমণ কমে যায়।
কি করবেন নাঃ
১।তামাক, জর্দা, আচার,চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, নানরুটি বা তন্দুর রুটি, কোমল পানীয়, কফি, কেক, প্যাস্ট্রি, কিমা, টেস্টিং সল্ট ও ভাজা বাদাম কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
২।গরুর মাংস,ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডলস কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৩।খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দুর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে।
৪।ডায়াবেটিস থাকলে ফ্যাট,তেল ও
মিষ্টিজাতীয় খাবার খাবেন না।
৫।কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য একেবারেই ভালো নয়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একদম খাবেন না।
৭। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশংকা থাকে। প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা তার কম ভিটামিন সি খাবেন।
৮।ডাবের পানিতে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, সোডিয়াম থাকায় কিডনি রোগীদের বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের এই পানি খাওয়া ঠিক না।

কোন মন্তব্য নেই
If you have any doubts please let me know