ক্লিক করুন এখানে

পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করলে | Poor primary result

আপনার সন্তান পরীক্ষায় ভালো যেমন করতে পারে তেমনি খারাপ ও করতে পারে। এটি খুবই স্বাভাবিক। সে রেজাল্ট (primary result) খারাপ করতেই পারে। সেজন্য বাবা, মা’র উচিত সন্তানের সাথে সংযত আচরন করা ও তার কোন সমস্যা থাকলে তা খুঁজে বের করে সমধান করা।


কি হতে পারেঃ

১। অনেক মা-বাবা সন্তানকে সামাজিক সম্মানের হাতিয়ার রুপে মনে করেন, যেখানে পরীক্ষার ফল একটি প্রেসটিজ ইস্যুতে পরিণত হয়ে যায়।  মা-বাবা তখন তীব্র প্রতিযোগিতায়  নেমে যান, এই লক্ষ্যে যে, যে ভাবেই হোক সন্তানকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।

 ২। খারাপ ফলের কারনে বাবা, মা সন্তানকে অন্য ভালো ছাত্রের সাথে তুলনা করে ব্যঙ্গ বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন।

৩। তার বন্ধু বা অন্য ভালো ছাত্রের সামনে অপমান করেন। “তুমি কোন কাজের না” বা তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না”—এ ধরনের মন্তব্য করেন।

৪। অত্যধিক বকঝকা করেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রহার করেন বা ঘরে বন্ধ করে রাখেন।

৫। পরিবারের দুর্ব্যবহারের (family pressure) কারনে বা পরিবারের কারো সহযোগিতা না পাওয়ার কারনে সন্তান মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, অনেক সময় আবগতাড়িত হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।  আবার অনেকে দু:খ সহ্য করতে না পেরে  “আত্মহত্যার” মত ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।








 কি করবেনঃ

 ১। বছরের শুরুতেই একটি পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। তাহলে পরীক্ষার আগে সে আর কোনো চাপ অনুভব করবে না। ক্লাসের (regular class) পড়া নিয়মিত শেষ করা ও হোম ওয়ার্ক (homework) যাতে ঠিক মত জমা দেয়, সেটা মা-বাবাকেই নিশ্চিত করতে হবে। 

২।  শিশু যেন সিলেবাস ঠিক মত অনুসরণ করে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। তাকে অল্প অল্প করে পড়ান ও বারবার লেখানোর অভ্যাস করান। এতে তার লেখার গতি, সেই সাথে আত্মবিশ্বাস ও বাড়বে।  সে যেন হেসে খেলে শিখতে পারে সেটা নিশ্চিত করুন।

৩। আপনার বাচ্চা পড়াশোনায় দূর্বল হলে হোম টিউটর রাখুন। নিয়মিত খোঁজ নিন। মাঝে মাঝে ছোট ছোট টেষ্ট নিতে বলুন। টেষ্টে ভালো করলে পুরষ্কার দিন। কিন্তু  খারাপ করলে বকা দেবেন না।

৪। পরীক্ষার আগে শিশুদের ঘুম যেন যথেষ্ঠ হয়। সে যেন রাত জেগে না পড়ে। পুষ্টিকর খাবার দিন ও বাইরের খাবার একদম না।

৫। শিশুর মধ্যে যেন পরীক্ষাভীতি না আসে। কোনভাবেই বলবেন না “ তোমাকে ভালো করতেই হবে বা অমুক থেকে বেশী নাম্বার পেতে হবে” ইত্যাদি।  পরীক্ষাভীতি থাকলে তার খাবার অরুচি হবে বা ঘুম হবে না।  তাকে আশ্বস্ত করুন ও সাহস দিন। কারন পরীক্ষাভীতি নিয়ে পরীক্ষা দিলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।   

৬। পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হলে কারণ খোঁজার চেষ্টা করুন। খোলাখুলি কথা বলুন তার সাথে আর বোঝার চেষ্টা করুন কেন এমন হল, তার কিছু বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল কি না বা অন্য কোন কারন আছে কি না ।

৭। এবারের রেজাল্ট যদি আগের বারের চেয়ে একটু ভালো ও হয়, তবে এটাকে ভালো ফল হিসেবেই বিবেচনা করুন। ক্লাস টিউটর বা হোম টিউটর থেকে ও জেনে নিতে পারেন, আপনার সন্তানের দূর্বলতার কথা বা স্কুলে অন্য কোন সমস্যার কথা।

৮। অনেক সময় পারিবারিক সমস্যা (family problem), মা-বাবার মধ্যে তীব্র কলহ, স্কুলের শিক্ষক বা সহপাঠী দ্বারা উত্ত্যক্ত হওয়া ইত্যাদি কারনে ও আপনার সন্তান পড়াশোনায় অমনোযোগী হতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে পরীক্ষায় খারাপ করতে পারে। ও রকম মনে হলে, আসল কারনটি খুঁজে বের করুন। 

৯। পরীক্ষার আগে আগে আপনার বাচ্চার বিনোদনের ব্যবস্থা করুন যেমন কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান, পছন্দের কিছু কিনে দিন বা পরীক্ষায় ভালো করলে ভালো কিছু কিনে দেবার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন। 

১০। সবাই পড়াশোনাতে ভালো নাও হতে পারে। সে ভালো ছাত্র/ছাত্রী না হলেও তার প্রতি অবহেলা করবেন না। বরং তার অন্য সম্ভাবনাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। সাহস দিন। হয়ত সে ভালো গায়, কারিগরী জ্ঞান তীক্ষ্ণ বা প্রযুক্তিগত কোন কিছু ভালো পারে, লিখে ভালো, আঁকতে পারে, ভালো বক্তা অথবা খেলাধূলায় ভালো।

 


কি করবেন নাঃ

১। সন্তানের ফলাফল যাই হোক, অন্য কারও সঙ্গে  তুলনা  করবেন না। যেমনঃ “তোমার ক্লাসের অমুক এত ভালো রেজাল্ট করল আর তুমি কি করলা?” ইত্যাদি।   

২। খারাপ ফলাফলের জন্য কটূক্তি, ব্যঙ্গ বা বকাবকি ইত্যাদি করবেন না।  তার পছন্দের কাজ থেকে তাকে বিরত রাখবেন না, যেমন টিভি দেখা, গেম খেলা বা খেলাধূলা। মোটকথা, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করবেন না। 

৩। ফলাফল খারাপ দেখেই চাপ বাড়িয়ে দেবেন না। কোন টার্গেট ঠিক করে দেবেন না, যেমন “আগামী টেষ্টে তোমাকে অনেক ভালো করতেই হবে” বা “যদি রেজাল্ট ভালো না হয় তাহলে আর খেলতে দিবনা বা বাইরে নিয়ে যাব না”, ইত্যাদি । এরকম চাপের কারনে তার ফলাফল আরও খারাপ হতে পারে।

৪। তার ভুলের কথা বারবার মনে করিয়ে দেবেন না, তার পরিবর্তে তাকে উৎসাহ দিন পজেটিভ কথা দিয়ে ।

৫। সন্তানের খারাপ রেজাল্টের জন্য শিক্ষককে দোষারোপ করবেন না। এতে শিক্ষকের প্রতি আপনার সন্তানের একটা বিরুপ মনোভাব তৈরী হতে পারে।  শিক্ষকের সহযোগিতা নিন।   

৬। বাচ্চার সাথে আপনার যেন দূরত্ব তৈরী না হয় সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এমনটা হলে সে অনেক কিছু আপনার কাছে বলবে না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে এক ধরনের বৈরী মনোভাব তাকে বিদ্রোহী করে তুলবে। ভবিষ্যতে তার পরিনাম ভয়াবহ হতে পারে।  

 

জেনে রাখুনঃ

১। আপনার সন্তান স্কুলে যেটা শেখে সেটা আসল শিক্ষা না, ঘরে বাবা মা’র কাছে সে যেটা শেখে সেটাই আসল শিক্ষা। এই শিক্ষার উপরই নির্ভর করে, সে ভবিষ্যতে কি ধরনের মানুষ হবে ও মানব কল্যানে সে কতটুকু ভূমিকা রাখবে। 

২। বাবা মা দুজনকেই এক্ষেত্রে মূখ্য ভুমিকা নিতে হবে। 









কোন মন্তব্য নেই

If you have any doubts please let me know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.