হঠাৎ শ্বাসকষ্ট | shortness of breath cause
ফুসফুসের সাহায্যে আমরা শ্বাস নিয়ে থাকি, তাই ফুসফুসের যে কোনো ধরনের সমস্যা বা রোগের কারনেই মূলতঃ শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। এছাড়া ও বেশ কিছু ভিন্ন কারনেও শ্বাসকষ্ট হয়।
কেন হয়ঃ (what causes shortness of breath)
১। সর্দিকাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস হলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
২। হৃদরোগের কারণে হতে পারে।
৩। অতিরিক্ত মানচাপ চাপ, অবসাদ শ্বাসকষ্টের কারন হতে পারে।
৪। হজমের সমস্যা, অ্যালার্জি,
রক্তশূন্যতা, পেটের সমস্যা, গ্যাস ।
৫। মাত্রাতিরিক্ত ডায়াবেটিস, কিডনির অকার্যকারিতা।
৬। স্বাভাবিকের
চেয়ে বেশী ওজন ।
৭। ভাইরাস
সংক্রমণ, ঠান্ডা আবহাওয়া, ধুলাবালি,
সর্দিকারকাশি হলে।
৮। অতিরিক্ত ধূমপান,
ধোঁয়ার দূষণ,
হাঁপানি, নিউমোনিয়া।
৯। উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ,হার্ট
অ্যাটাক।
১০।করোনা বা কোভিড-১৯ হলে শ্বাসকষ্ট
হতে পারে।
১১।যক্ষ্মা থেকেও রোগী শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন।
১২।ফুসফুসের ক্যানসার বা
যে কোনও
ধরনের টিউমারের
কারনে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
১৩। হিস্টিরিয়া রোগ থাকলে রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
১৪।পেটে ক্রিমি থাকারে কারনে শিশু
শ্বাসকষ্টে ভুগে অনেক সময়।
লক্ষন কি (shortness of breath as a symptom):
১। বুকে ভারী কোনো চাপ
অনুভব করা
বা বুকব্যথা
করা,বুকের ভিতর শোঁ-শোঁ শব্দও হতে পারে।
২। কাশি, জ্বর বা র্যাশ।
৩। নিঃশ্বাস নিতে
কষ্ট হওয়া
বা গভীরভাবে শ্বাস
নিতে না পারা।
কি করবেনঃ
১।শ্বাসকষ্ট হলে একাধিক বালিশ দিয়ে মাথার
দিক উঁচু
করে কাত
হয়ে শোবেন। হাঁটু সামান্য ভাঁজ করে
রাখুন।
২. হাঁপানি
থাকলে ইনহেলার ব্যবহার করুন বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিন।সাধারনভাবে
শ্বাসকষ্ট কমতে সময় লাগবে ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। কিন্তু সঠিক ভাবে ইনহেলার ব্যবহার করা জানতে হবে।
৩।চিকিৎসকের পরামর্শনুসারে
ও শ্বাস কষ্টের তীব্রতা ও লক্ষন অনুযায়ী নেবুলাইজেশন, অক্সিজেন থেরাপি,ফ্লুইড নিষ্কাশন,রেডিওথেরাপি বা ওষুধ সেবনের প্রয়োজন
হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়ঃ
১। ধূমপান ছেড়ে দিলে ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ,হৃদরোগ, এমনকি ক্যান্সারের
ঝুঁকি ও অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। তাই ধূমপান ত্যাগ করুন যত দ্রুত সম্ভব। হয়ত রাতারাতি
এটি হবে না। আস্তে আস্তে ধূমপানের পরিমান
কমিয়ে দিন।একটি রুটিন ধরে ধূমপান করতে পারেন। এভাবে নিজেকে সংযত করে এগোলে একসময়
পুরোপুরি ভাবেই ধূমপান ত্যাগ করা সম্ভব।এ ক্ষেত্রে আপনার ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে
প্রবল ভাবে।
২।নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
খুব ভারী না হলে ও কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাটুন প্রতিদিন।এতে ফুসফুস থাকবে
সুস্থ,শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর হবে।
হার্টের রোগ ও হওয়ার ঝুকি অনেক কমে যাবে।
৩। যাদের
শ্বাসের সমস্যা আছে, তাদের বেশী উচ্চতায় ভ্রমন
করা উচিত নয়, বিশেষ করে হাঁপানি রোগীদের। উদাহরস্বরুপ,সি লেভেল থেকে ৫০০০ ফুট বা
তার বেশী উচ্চতায় বাতাসে
অক্সিজেনের পরিমাণ কমে
যায়, যার কারনে অনেকের শ্বাস নিতে অসুবিধা
হতে পারে।
৪।স্থূলতার বা মোটা হওয়ার
সাথে শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্পর্ক আছে। কারন সামান্য পরিশ্রমেই তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন, এমনকি শ্বাসকষ্ট ও হয় অনেকের। নিয়মিত ব্যায়াম করা ও ওজন
ঠিক রাখা এজন্য
অত্যন্ত জরুরী।
৫।প্রতিকূল পরিবেশ ও শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যে এলাকাতে কোন অ্যালার্জেন, গ্যাস, বিষাক্ত
বস্তু বা পদার্থ থাকে (যেমনঃ কল-কারখানা ) সে সব এলাকা থেকে দূরে থাকলে শ্বাসকষ্টের
ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
ঘরোয়া টোটকাঃ
১।আদা,শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে পারে। এর ফলে অক্সিজেন স্বাভাবিক ভাবে ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। বেদানার রস এবং মধুস সাথে আদার রস মিশিয়ে, এই মিশ্রনটি দিনে ২-৩ বার খেলে দেখবেন দারুন উপকার মিলবে।
২। সরিষার তেল রেসপিরেটারি প্যাসেজকে উন্মুক্ত করে দেয়। ফলে শ্বাস নিতে
কোন কষ্ট
হয় না। অ্যাজমা বা শ্বাস কষ্ট হলে অল্প করে
গরম সরিষার তেল,বুকে-পিঠে ভাল করে
মালিশ করতে
হবে। এতে কষ্ট কমে আসবে অনেকখানি।
৩। ডুমুরের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম।কয়েকটি ডুমুরকে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা খালি পেটে পানি দিয়ে খেয়ে ফেলুন।
৪।রসুন দুধের সাথে অথবা এমনি পানির সাথেও খেতে পারেন। শুধু ফুসফুসের দক্ষতা নয়,কোলেষ্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখতে ও রসুনের জুড়ি নেই।
৫।অ্যাজমার বা হাঁপানির প্রকোপ কমাতে কফি দারুন কাজে আসে। অক্সিজেন সহজেই ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে, শুধু এক কাপ কফি খেলেই। তবে কফি যত কড়া হবে, তত উপকার পাবেন। শ্বাস নিতে অসুবিধা হলেই কফি খেয়ে নিতে পারেন। তবে দিনে ৩ কাপের বেশি কফি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
৬. মধু অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ করে মধু মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন। খেতে হবে দিনে তিনবার।
৭। পেঁয়াজ আছে প্রচুর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু কাঁচা পেঁয়াজ খেলেই কিন্তু এই উপকার পাবেন।
শিশুদের শ্বাস কষ্ট ও প্রতিকারঃ শীত শুরু হলে শিশুদের ঠাণ্ডা থেকে নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, অ্যাজমাসহ শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন অসুখ হতে পারে। তাই এই সময়ে শিশুর বাড়তি যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
কিছু টিপসঃ
১। শীতে বৃষ্টি কম হওয়ায় ধুলাবালি, গাড়ির ধোঁয়া আর আবর্জনা থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
২।মায়ের বুকের দুধ জন্মের পরে থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।যেসব শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো না হয় তারা বেশি শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগে।
৩।অতিরিক্ত গরমে বা ঠাণ্ডায় যেন শিশুর গা ঘেমে ঠাণ্ডা লেগে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। না হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।
৪। শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৫। সিগারেটের ধোঁয়া শিশুদের জন্য
বেশি ক্ষতিকর। তাই শিশুর সামনে ধূমপান
করবেন না। এ ছাড়া রান্নার
চুলার ধোঁয়া,
বাতাসে ধুলোবালি,
ফুলের রেণু,
কার্পেটের ধুলা থেকে শিশুকে দূরে
রাখুন।
জেনে রাখুনঃ
১। বেশিরভাগ শ্বাসকষ্ট ফুসফুসের সমস্যার জন্য হয়ে থাকে।
২। হাঁপানি বা অ্যাজমা মূলত একটা জেনেটিক বা বংশগত রোগ।
৩। সব শ্বাসকষ্টই কিন্তু হাঁপানি নয়।
৪। এক বছরের কম বয়সী শিশুরা ব্রংকিউলাইটিসে বেশি আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে যে শিশু মায়ের দুধ কম পায় বা ওজন কম হয় তারা বেশি আক্রান্ত হয়। ব্রংকিউলাইটিসের মাত্রা বেড়ে গেলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
৫। বাবা-মায়ের অ্যালার্জি অ্যাজমা বা হাঁপানি থাকলে শিশুরও হতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেনঃ
১। বুকে ব্যথা হলে, কাঁপুনি সহ জ্বর আসলে দেরি না করে চিকিৎসকের সাথে দেখা করুন।
২। সামান্য পরীশ্রমেই শ্বাসকষ্ট
হলে।
৩। অকারনে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে।
৪। জিব, নখ বা আঙুল নীল হয়ে গেলে, কথা বলতে না পারলে বা চেতনা হারিয়ে যেতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া উচিত।

কোন মন্তব্য নেই
If you have any doubts please let me know