ক্লিক করুন এখানে

শিশুর শিষ্টাচারিতা | manners for Kids

 শিষ্ট কথাটির অর্থ বিনম্র, ভদ্র, মার্জিত, সভ্য এবং আচার কথাটির অর্থ আচরণ, ব্যবহার, চরিত্র। শিষ্টাচার হচ্ছে মানব চরিত্রের অন্যতম সর্বোৎকৃষ্ট গুন। শিশুদের ছোট বেলা থেকেই গুরুত্ব দিয়ে  শিষ্টাচারিতার দীক্ষা দেয়া গেলে,সে একজন আদর্শ মানুষ হয়ে উঠবে। চলুন,দেখে নিই আমরা সন্তানদের কি কি বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারি।


কি শেখাবেন সন্তানকেঃ

১।বাবা,মা বা ঘরের কোন গুরুজন কোন কথা বললে মনোযোগ দিয়ে শোনা ও পালন করা।   

২।বড়রা কথা বললে মাঝখানে কথা না বলা। কথা বলতে চাইলে “আমি কিছু বলতে পারি”—বলে অনুমতী নিয়ে কথা বলা।

৩।ঘরে কাজের লোকের সাথে ভালো ব্যবহার (good etiquette) করা। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার না করা বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করা। অনুরুপ ভাবে গাড়ির ড্রাইভার, বাড়ির দারোয়ানের সাথে নম্র, ভদ্র ব্যবহার করা। 

৪।হাঁচি,কাশি আসলে মুখে হাত দেয়া ও “আলহামদুলিল্লাহ” বলা। তাছাড়া সন্তানদের এটিও শেখান যে কারো সামনে কান বা নাকের ময়লা পরিষ্কার করা অশোভনীয়। 

৫।ঘরে মেহমান আসলে (guest etiquette) তাদের সাথে হাসি মুখে কথা বলা ও আপ্যায়নে মা’কে সাহায্য করা। 

৬।ফোন আসলে (answering phone calls etiquette)  “আসসালামুআলাইকুম” বলা।ফোনের অপর পাশ থেকে অপর ব্যক্তি যখন কথা বলেন তখন তা চুপ করে শোনা ও বুঝে উত্তর দেয়া। ভুল নম্বরে ফোন গেলে বা ভুল নম্বর থেকে ফোন আসলে দুঃখিত বলে টেলিফোন রাখা ও কথার মাঝখানে কল কেটে না দেয়া।

৭। বাবা, মা বা ভাই বোনের যে কোন জিনিস জিজ্ঞেস করে দেখা বা হাত দেয়া। লুকিয়ে কোন কিছু না নেয়া বা ব্যবহার করা একদম উচিত নয়।আর ধার নেয়া জিনিস যথা স্থানে ঠিক সময়ে ফেরত দেওয়াটাও তার শেখা উচিত।

৮।কোন অবস্থাতেই বাবা, মা বা ঘরে অন্য কোন গুরুজনের সাথে তর্কাতর্কি বা বেয়াদবি না করা । কোন কিছু বললে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলা ও তাদের মানানোর চেষ্টা করা। আর বেয়াদবি করলে বা ভুল হলে অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া।

৯।প্রাথমিক শিষ্টাচারগুলির মধ্যে দয়া করে‘ বা প্লিজ‘ বলার গুরুত্ব অপরিসীম। কারো কাছে কিছু চাইতে বা বিভিন্ন সামাজিক স্থানে (social etiquette) সন্তান যেন প্লিজধন্যবাদ (কোনওকিছু প্রাপ্তির সময়) এই দুটি শব্দ ব্যবহার করে। কোথায় কিভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটি ও বুঝিয়ে দিন।

এই শব্দগুলি ব্যবহার করার অভ্যাস একজনকে সমাজে সম্মানিত এবং প্রশংসিত করে তোলে আপনার সন্তান তখন একজন  নম্র এবং উষ্ণ হৃদয়গ্রাহী মানুষ হিসেবে সবার কাছে গন্য হবে

১০। সঞ্চয়ের অভ্যাস করান সন্তানকে। যেমনঃ একটি পিগি ব্যাংক দিতে পারেন, যাতে সে টাকা জমা করে রাখবে। 

১১। টাকা জমানোর পাশাপাশি মাসে অন্তত একবার তাকে দিয়ে দান করান, হতে পারে কোন ভিক্ষুককে দেয়া, মসজিদে দান করা ইত্যাদি। 

১২। বাথ্রুমে টয়লেটে টিস্যু ব্যবহার করা ও ফ্ল্যাশ করা। 

১৩।প্রতিদিন দিনে দুবার দাঁত মাজা।প্রতিবার খাবারের পর কুলকুচি করা ও জিভ পরিষ্কার করা।শিশু অবস্থায়ই এই অভ্যাস গুলো গড়ে তুলতে হবে ও এটি যেন নিয়মিত করে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে সন্তানকে পুরষ্কার দিন। এতে সে উৎসাহিত হবে।

১৪। বাইরে বাড়ি ফেরার পর বা স্কুল থেকে এসে বাচ্চা গোসল করা।এতে সে নিজেকে তাজা অনুভব করবে, কাজে আনন্দ পাবে। আর রাতে ভালো ঘুম ও হবে। দাঁত মাজার মত এটি ও করতে হবে প্রতিদিন। 

১৫।  খাওয়ার আগে পরে ভালো ভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া তাকে এটা বোঝাতে হবে হাত না ধুলে হাতে লাগা জীবাণু থেকে বিভিন্ন সংক্রমণ হতে পারে। তাছাড়া বাইরে থেকে খেলে এসেও  একই কাজ করতে হবে।

১৬। খাবার টেবিলে (fine dining etiquette) ও শালীনতার প্রয়োজন, ছোট বেলা থেকে এই নিয়ম চালু করতে পারেন। খাবার সময় বেশী কথা না বলা, হাসি-ঠাট্রা না করা, ঝগড়া না করা,কেউ কিছু চাইলে এগিয়ে দেয়া ইত্যাদি নিয়মগুলো রীতিতে পরিনত করুন। আর বিসমিল্লাহবলে খাওয়া শুরু করতে যেন না ভুলে।  

১৭। আপনার বাচ্চাকে এমন শিক্ষা দিন যাতে তার মধ্যে অন্যের উপকার করার প্রবনতা গড়ে উঠে। অন্যের প্রতি সদয় হওয়ার শিক্ষা বাল্যকালেই দিতে হবে। টাকা পয়সা দিয়ে না হোক,কথা দিয়ে বা সামান্য শ্রম দিয়ে ও যে অন্যের উপকার করা যায়এটা তাকে শিখিয়ে দিন।

১৮।অন্যকে নিয়ে মজা করলে এটি তাকে মানসিক ভাবে আঘাত দেয়া হয়--এটা শিখিয়ে দিন আপনার বাচ্চাকে। যে যেন অন্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা না বলে বা অন্যের দূর্বলতা নিয়ে উপহাস না করে।  

১৯। ঘরে কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা করা বা পাশে থাকা।

২০। ঘরে কি বাইরে বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান জানানো, তাদের সাথে হাসি-মুখে কথা বলে। অবজ্ঞা না করা। যেমন বাসে, ট্রেনে কিংবা ভ্রমনে, বয়ষ্ক বা দূর্বল লোক দেখলে তাকে বসার সুযোগ দেয়া, বা আগে নামতে দেয়া বা তার জিনিস বহনে সাহায্য করা ইত্যাদি।

২১। যে কোন পরাজয়কে সহজ ভাবে নিতে হয়শেখান আপনার বাচ্চাকে। কোন প্রতিযোগিতায় হেরে গেলে, সন্তানের হয়ত মনে আঘাত লাগতে পারে এবং এটাই স্বাভাবিক। বাবা-মা হিসাবে তাকে সমর্থন করা এবং অনুপ্রাণিত করা আপনার দায়িত্ব।সন্তানকে বুঝিয়ে দিন যে এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। জীবনে হার জিত থাকবেই। সে যে চেষ্টা করেছে এটাই বড় কথা।

২২। কারও ঘরে প্রবেশ করার আগে সে যেন দরজায় কড়া নেড়ে অনুমতি চেয়ে নেয় ভেতরে প্রবেশ করার জন্য। অনুমতী পেলেই যেন প্রবেশ করে।

২৩।বাচ্চারা নিজেরাই যেন নিজেদের চুল চিরুনি করতে পারে সেটি শিখিয়ে দিন। তাছাড়া   গোসলের সময় মাথায় শ্যাম্পু ব্যবহার করা, চুলে তেল দেয়া,ক্রীম, লোশন লাগানো  ইত্যাদি একবার শিখে গেলে আর আপনার চিন্তা নেই। শেখাতে হয়ত সময় লাগবে, কিন্তু এক সময় ঠিকই শিখে যাবে !

২৪। ভাই বোনদের সাথে মিলেমিশে খেলা বা খাওয়া—এই অভ্যাস শিশুদের মধ্যে জাগ্রত করা খুব জরুরী। কোন কিছু খেলে বা কোন কাজ করলে যেন সবাই ভাগ করে নিতে শেখে—মা বাবা’র উচিত এটি খেয়াল করা। এতে একে অপরের প্রতি মমতা বাড়বে ও পরষ্পরের সম্পর্ক আজীবন নির্মল ও সুন্দর থাকবে।

২৫।নিজেদের খেলনা জামাকাপড়, পায়ের সু/স্যান্ডেল যথাস্থানে গুছিয়ে রাখাএই শিষ্টাচার জ্ঞান শিশুর থাকা দরকার। দু-একবার দেখিয়ে দিলে সে নিজেই করতে পারবে।

২৬। সততা এমন একটি চারিত্রিক গুন, যা আপনার শিশুর নৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। ছোট কাল থেকেই বাচ্চাকে বোঝান, সে যেন মিথ্যে কথা না বলে, কাউকে না ঠকায়, অসত্যের কাছে মাথা নত না করে। আর উৎসাহ ও সাহস দিন তার প্রতিটি কাজে।

২৭। কোনও ব্যক্তির দিকে আঙ্গুল তুলে বাশারা করে কথা না বলা।

২৮। কোন কিছুর জন্য হিংসা বা জিদ না করা।  প্রথম থেকেই এই শিক্ষা দিলে বাচ্চা আর ও পথে পা বাড়াবেনা।


স্কুল-কলেজে শিষ্টাচার (good manners for students in school):

১। স্কুল ছুটি হলে ক্লাশ থেকে অন্য কোথাও যাবেনা বা একা একা খেলবে না। গেইটে বাবা, মার জন্য অপেক্ষা করা। 

২। সহপাঠীদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবে, জুনিয়ার বা সিনিয়ার হোক। অপছন্দনীয় কেউ থাকলে তার থেকে দূরে থাকা।

৩। কেউ চাইলে পেন্সিল, রাবার ধার দেবে, কিন্তু অন্যদের জিনিস না নিতে চেষ্টা করবে।

৪।কারো সাথে ঝগড়া বা মারামারি না করা। কেউ সমস্যা করলে স্যার বা ম্যাডামকে জানানো।

   

শেষ কথাঃ

বাবা-মা সন্তানদের জন্য রোল মডেল আপনার প্রতিটি কথা ও কাজ আপনার বাচ্চা খেয়াল করে গভীর ভাবে।দেখে দেখেই সে শিখতে চেষ্টা করে। আপনার কর্মকান্ড সন্তানের জন্য ইতিবাচক হতে পারে, আবার নেতিবাচকও হতে পারে তাই বাচ্চাদের সামনে এমন কিছু করা উচিত নয়, যা, তার মনে বিরুপ প্রভাব ফেলবে। বরং তার সামনে উদাহরন (etiquette examples) তৈরী করুন ভালো কাজের।






কোন মন্তব্য নেই

If you have any doubts please let me know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.