ক্লিক করুন এখানে

কেন প্রতিদিন হাটবেন | Daily walking benefits

সুস্থ ও রোগহীন থাকতে নিয়মিত হাঁটা (Daily Walking health benefits) সবচেয়ে জনপ্রিয়,সহজ ও দুর্দান্ত একটি ব্যয়াম।রুটিন করে হাঁটলে আপনি সহজেই অনেক কঠিন রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন। তাই কম বয়সেই হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিৎ।  

 


হাঁটার উপকারিতা: 

১।মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক হওয়ার অন্যতম কারন গুলো হল অতিরিক্ত ওজন,কম পরীশ্রম,অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহন এবং পরিমিত ঘুমের অভাব। প্রতিদিন দৈনিক এক ঘণ্টা করে সপ্তাহে পাঁচ দিন হাঁটলে স্ট্রোকের ঝুঁকি শতকরা ৪৫-৫০ ভাগ কমে যায়

২। হাঁটার সময় হৃৎস্পন্দন শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি এবং পেশিতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে।সার্বিকভাবে বেড়ে যায় শরীরের কর্মক্ষমতা

৩। যারা নিয়মিত হাঁটেন তাদের সর্দি-কাশি কম হয়।নিয়মিত হাঁটলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।

৪।হাঁটার সময় মস্তিষ্কে ভালো লাগার কিছু ক্যামিকেল যেমন  এনডর্ফিন, ডোপামিন, সেরোটোনিন নিঃসরণ হয়। যার ফলে ভালো লাগার অনুভূতি জাগে, মানসিক চাপ অনেকটাই কমে আসে,ঘুম আরামদায়ক হয়। 

৫। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটা দারুন উপকারী। এতে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রক্ত নালিতে সহজে ব্লক হয় না, রক্তনালীর দেয়াল শক্ত হয়না। ফলে শরীরে বেশি পরিমাণে রক্ত সরবরাহ হয়এবং ধমনির ওপর চাপ কম পড়ায় উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। রক্তে মন্দ কোলেস্টেরল (Walking burns fat) বা লো ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন কমে যায়। এই মন্দ কোলেস্টেরলের পরিমাণে বেড়ে গেলে তা ধমনির গায়ে জমা হয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

নিয়মিত হাটলে  হার্ট অ্যাটাকের (Walking good for the heart) ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কম থাকে ।

রেফারেন্সঃ https://www.prevention.com/fitness/a20485587/benefits-from-walking-every-day/

সপ্তাহে ৫ দিন, ৩০ মিনিট করে প্রতিদিন হাটলে হৃদরোগ হ ওয়ার সম্ভাবনা ১৯% কমে যায়। রেফারেন্সঃ https://www.healthline.com/health/benefits-of-walking#heart-health

 

৬।নিয়মিত হাটলে বা পরীশ্রম করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ (Walking good for diabetes) অনেক সহজ হয়ে যায়। ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে এবং ব্লাড সুগার কমে যায়।

·     ৭। হাঁটার ফলে হাড় ক্ষয়ের (Is walking good for osteoporosis) প্রবণতা হ্রাস পায়, সেই সাথে হাড়ের বিভিন্ন রোগ যেমন আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস সহ হাড়ের অন্যান্য নানা রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। বিশেষ করে বয়স্ক পুরুষ ও পোস্ট মেনপোজাল মহিলাদের হাড় অনেক দূর্বল হয়ে পড়ে। হাঁটাচলা ক্ষেত্রে হাড় ও শরীরের মাসেল কে শক্তিশালী করে তুলে।

 ৮। হাঁটলে হাড়ের জয়েন্ট গুলো সুস্থ থাকে। ফলে বাতের ব্যাথা অনেক কমে যায়। তবে হাটতে হবে নিয়মিত।

৯।যারা নিয়মিত হাটেন (সপ্তাহে ৫ ঘন্টা বা তার বেশী)তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় অনেক কম থাকে

১০। ওজন কমাতে শুধু ডায়েটিং করলেই পূর্ন ফল পাওয়া যায় না।  সাথে সাথে নিয়মিত হাঁটাচলা (Walking exercise to lose weight) ও স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার খেতে হবে। সেই সাথে প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা বাধ্যতামূলক করুন।

১১। ব্রিটিশ জার্নাল অব ক্যানসার স্টাডিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, হাঁটার কারনে খাদ্যনালির নীচের অংশের ক্যানসারের ঝুঁকি ২৫% কমে যায়। কমে যায় কোলন বা বৃহদান্ত্রের ক্যানসারের আশঙ্কাও

১২।নিয়মিত হাটলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

১৩। যারা হাঁটেন তাদের মিষ্টি জাতীয় খাদ্যগ্রহণের প্রবণতা অন্যদের তুলনায় কম থাকে। ফলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও কমে যায়।

১৪। হাঁটার পাশাপাশি হালকা স্ট্রেচিং, জগিং ইত্যাদি ও করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত চাপ নেবেন না।

 

কোথায়,কখন ও কিভাবে হাটবেনঃ 

১।ঠিক করুন কোথায় হাটবেন। খোলামেলা ও নিরাপদ জায়গা বেছে নিন যাতে মনের আনন্দে হাঁটতে পারেন। হাঁটার জায়গা যেন অবশ্যই সমতল ও পরিষ্কার হয় । 

২।হাটার সময় মোবাইলে প্রিয় গান বা যে কোন লেকচার, পবিত্র কোরানের বানী শুনতে পারেন। তাতে সময় ভালো কাটবে আর কষ্ট ও টের পাবেন না। 

৩।হাঁটার রুটিন ঠিক করুন ও সেটা মেনে চলুন। যেমন,পরিবেশ নিরাপদ হলে ভোরে হাঁটা সবচেয়ে উত্তম। কারন এ সময় বাতাস থাকে দূষণ মুক্ত ও লোকজন কম থাকায় কোলাহল মুক্ত। সকালে না হলে বিকাল বা সন্ধ্যায় হাটার জন্য সময় ঠিক করে নিতে পারেন। তবে দুপুরে নয়। চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একই সময়ে হাঁটতে।    

৪। যারা বাইরে বেরোতে পারেন না, তারা ট্রেডমিল মেশিন (Walk to reduce weight treadmill) কিনে নিতে পারেন। আপনার সুবিধামত গতি ঠিক করে ৩০-৪০ মিনিট হাটুন।

 

কত সময় হাঁটবেনঃ

১।শুরুতে ৩০-৪০ মিনিট দরকার নাই। ১০-২০ মিনিট হাঁটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। একদিনে বেশি করতে যাবেন না। এতে শরীরে চাপ পড়বে।  ১০ মিনিট হেটে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার শুরু করুন। এভাবে আস্তে আস্তে সময় বাড়ান।

২।প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন হাটুন। ৬ দিন হলে ক্ষতি নেই।তবে শুরুর দিকে ৩-৪ দিন হাটুন কিছুদিন। শুরুতে কষ্ট হবে, তবে ধৈর্য্য ধরে হাটতে থাকলে এক সময় অভ্যাসে পরিনত হয়ে যাবে।

 

কি করবেন নাঃ 

ক। হাঁটতে ভালো না লাগলে জোর করে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হাটবেন না। 

খ। অস্বস্তি লাগলে বা হার্ট বিট বেড়ে গেলে হাঁটা বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। ভালো লাগলে আবার হাটতে পারেন। তবে বিশ্রামের সময় মোবাইল দেখবেন না। 

গ।আপনার সুবিধামত সকালে বা বিকেলে হাঁটতে পারেন। তবে রোদে হাটবেন না।

ঘ। কাউকে দ্রুত হাঁটতে দেখে তার সাথে প্রতিযোগীতায় নামবেন না। বরং ধৈর্য্যের সাথে নিজস্ব স্বাভাবিক ও একই গতিতে হাটুন।  

  

হাঁটার জন্য কিছু টিপসঃ

১।হাঁটার মাঝে সামান্য পানি খেতে পারেন।হাঁটা শেষে ভালো মত গোসল করুন। শরীর পরিষ্কারের সাথে সাথে মন ও ফ্রেস লাগবে। 

২।হাঁটার জন্য লাগবে আরামদায়ক কেডস বা জুতা,ঢিলাঢালা টি শার্ট বা গেঞ্জি এবং ট্রাউজার। মোবাইল এ সময় হাতের কাছে না রাখাই ভালো। 

 

হাঁটা অন্যান্য ব্যয়াম  থেকে ভালোঃ 

১।দৌড়ালে অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হয়, পেশিতে টান পড়ে।যা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু হাঁটলে এ সম্ভাবনা নেই। 

২।হাটা অনেক সহজ,পরীশ্রম কম ও সপ্তাহে পাঁচ/ছয় দিন ৩০ বা ৪০ মিনিট হাঁটাই যথেষ্ট। জগিং ও অ্যারোবিকসে কঠোর পরীশ্রম হয়,পেশীতে চাপ পড়ে।ঘাম হয়। কিন্তু হাঁটলে পেশির ওপর এত কঠোর প্রভাব ফেলে না। শরীরের ওপর কম চাপ পড়ায় প্রতিদিন হাঁটা যায়, যেটি জগিং এর ক্ষেত্রে অনেক সময় সম্ভব হয় না। 

৩।দৌড়ানো, জগিং বয়স্ক লোকদের পক্ষে করা দুঃসাধ্য, অন্যদিকে সব বয়সেই কম বেশী হাঁটা খুব একটা কষ্টদায়ক নয়।   

  

জেনে রাখুনঃ 

১।গবেষণায় এটি প্রমানিত হয়েছে যে, যিনি সপ্তাহে ৫ দিন প্রতিদিন ১০,০০০ স্টেপ হাটাহাটি করেন,তিনি ডায়বেটিস থেকে বেশী নিরাপদে থাকেন,তার থেকে যিনি প্রতিদিন ৩,০০০ স্টেপ হাঁটেন। 

২। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচ দিন হাটলে, আর  সেই সাথে শরীরের ওজন % কমাতে পারলে, টাইপ ডায়েবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে প্রায়  ৫৮% ।

৩। মনের মত এখন হাটার সঙ্গী পেলে আপনার এনার্জি ও উৎসাহ দুটোই বাড়বে দিগুন হারে।  






কোন মন্তব্য নেই

If you have any doubts please let me know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.