ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভংশ রোগ । How to deal Dementia symptoms
ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভংশ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতি, বুদ্ধি, ও ব্যক্তিত্ব ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। সাধারণত ৬৫ বছরের পরে এ রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। এই রোগের স্থায়ী কোনো প্রতিকার না থাকলে ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত খাওয়া, ঘুম ও প্রাত্যহিক জীবন পরিচালনা করলে অনেকটা ভালো থাকা সম্ভব।
কেন
হয়ঃ
১। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, এইডস,,
থাইরয়েডের সমস্যা, হার্টের রোগ,ব্রেন
টিউমার।
২। দীর্ঘমেয়াদি ওসুধ সেবনের
পার্শ¦-প্রতিক্রিয়া।
৩। জেনেটিক বা বংশগত কারণ।
৪। দীর্ঘ দিন ধরে বিষন্ন থাকা।
৫। শরীরে ভিটামিন বা
খনিজের ঘাটতি।
৬। বায়ুদূষণে প্রত্যক্ষ ভাবে
হৃদরোগ, হাঁপানির
পাশাপাশি মস্তিষ্কের
স্নায়ুর ক্ষতি করে, তার ফলে স্নায়ুর নিউরোনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত
হয় ও
মস্তিষ্কে তথ্য পৌঁছে দিতে দেরী হয়।
৭। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল
কমে যাওয়া
।
৮। দীর্ঘমেয়াদি
ধূমপান বা
মদ্যপান।
লক্ষন কিঃ
২।স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা।
৩।জিনিসপত্র ভুল জায়গায় রাখা।
৪। পরিচিত লোকের নাম ও চেহারা ভুলে যাওয়া।
৫। সহজে বিমর্ষ
ও মর্মাহত
হয়ে পড়া।
৬।কোন কিছুর প্রতি
আগ্রহ হারিয়ে
ফেলা।
৭। একই প্রশ্ন
বার বার করা।
৮। বিচার বিবেচনার
অভাব।
৯।রাগের প্রবণতা, বিভ্রম
এবং ভুল
বকা।
১০। অসংযম, চলাফেরায়
অসুবিধা, খাবার
গিলতে সমস্যা।
১১।
পরিচিত কাজ বা জায়গা ভুলে যাওয়া।
করনীয়
কিঃ
১।বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু ও পরিবারের সবার সাথে বেশি সময় কাটাতে হবে। পরিবারের কারো সাথে মনোমালিন্য বা দুর্ব্যবহার,উনাকে মানসিক চাপে ফেলতে পারে ও ডিমেনশিয়া রোগের কারন হতে পারে। এজন্য পরিবারে সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
২।রোগ সনাক্ত হলে দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে। অনেক সময় চিকিৎসক স্টেজ অনুযায়ী ওষুধ দেন যেগুলো রোগীর চিন্তাশীলতা ক্ষমতা বাড়াতে কিছুটা সাহায্য করে।
৩। বিভিন্ন রকম কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে
হবে যেমন- ম্যাগাজিন বা বই
পড়া, আড্ডা
দেয়া,দাবা/কেরাম খেলা অথবা যেকোনো সৃজনশীল
কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে মস্তিষ্ক সচল ও সুস্থ
থাকবে।
৪।বেশি করে তাজা শাকসবজি, ফলমূল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
৫।প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রাম
ও পর্যাপ্ত
ঘুম মস্তিষ্কের
জন্য খুব
দরকার।
৬। ধূমপান, মদ্যপান কিংবা যেকোনো তামাকজাত দ্রব্য বর্জন করতে হবে।
৭।রক্তচাপ এবং ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ।
৮।অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ দেবেন আর সেই সাথে জেনে নিন এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কে কোনো রকম বিরুপ প্রভাব ফেলবে কিনা ।
৯।যথেষ্ট পানি পান
করতে হবে৷
তবে বাজারের জুস, কোমল পানীয় একদম নয়। তবে
চা/কফি হলে অবশ্যই চিনি ছাড়া।
১০।পরিমিত ঘুম শরীরের বিষক্রিয়া বা টক্সিন বের করে দেয়,তাই প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো দরকার ৷ রুম যেন স্যাত স্যাতে বা অপরিষ্কার না হয়।
১১।ভারত এবং ইংল্যান্ডের
গবেষনায় দেখা গেছে একাধিক ভাষা শেখা থাকলে
ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায় বা ডিমেনশিয়া হবার
প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা যায়।
প্রতিকারের উপায়ঃ
১।বিভিন্ন সৃজনশীল কাজকর্মে ব্যস্ত থাকা।
২। ধূমপান এবং এলকোহল সেবন পরিত্যাগ করা ।
৩।ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৫।তাজা ফলমূল শাকসবজি খাওয়া।
৬।উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৭।দুশ্চিন্তামুক্ত এবং নিয়মমাফিক জীবনযাপন করা।
জেনে রাখুনঃ
১। বংশগতভাবে এ রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।
২। পুরুষদের চেয়ে নারীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশী।
৩।৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি।যাদের স্ট্রোক হয়েছে বা যাদের ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ,উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল রয়েছে তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৪। যাদের ডায়াসটোলিক রক্তচাপ নিয়মিত ৯০ এর ওপর থাকলে,তাদের ২০-২৫ বছর পর এরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৫ গুণ বেশি থাকে স্বাভাবিক মানুষের তুলনায়।
৫।হৃদরোগের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলে এ রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
৬।ধূমপান এইরোগের ঝুঁকি বাড়ায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত।
৭। স্থুলতা ও সাথে ডায়াবেটিস থাকলে আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ে।
৮।সঠিক খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব।
কিছু প্রয়োজনীয় খাদ্যঃ
১।দিনে একবার সালাদ খেলে তা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
২।সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, টুনা, ম্যাকরেল ইত্যাদি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এগুলো ওমেগা-৩ যুক্ত ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
৩।স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বাদাম দারুন কাজ করে। সপ্তাহে অন্তত ৪-৫ দিন অল্প বাদাম খান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এই দুটি উপাদান স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে ব্রেন পাওয়ার বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ৫-১০ টা বাদাম সামান্য পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত । সকালে বাদামটা এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে সেই বাদামের পেস্টটা ফুটিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলুন।
৪। রান্নার কাজে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
৫। ভুট্টা, গম, ওটস, লাল আটা, লাল চাল এসব শস্যযুক্ত খাবার, খাদ্য তালিকায় রাখুন।
৬। শিম ও শিমের বিচি ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে খুব উপকারী। এতে ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে।
৭। পালংশাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শালগম ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
১০। জাম নার্ভসেলের দূর্বলতা ঠিক করতে পারে আর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই সিজনে এক কাপ করে জাম খাওয়া শুরু করতে পারেন।
১১। এক চামচ মধুর সঙ্গে এক চিমটি দারুচিনির গুঁড়া খেলে অনিন্দ্রা দূর হবে,স্মৃতিশক্তি ও বৃদ্ধি পাবে। তবে খেতে হবে নিয়মিত।
১২।মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড স্মৃতিশক্তির খেয়াল রাখতে বড় বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই মাছ খান ঘন ঘন।
১৩। ডালিমে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ব্রেনের সার্বিক কর্মক্ষমতা বাড়ায়,এখন থেকেই এই ফলটি খাওয়া শুরু করুন সুযোগ পেলেই।
১৪।আমলকির ভিটামিন-সি ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমার রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। ব্রেনের কার্য ক্ষমতা ঠিক রাখতে চাইলে আমলকি খেতে ভুলবেন না হাতের কাছে পেলে।
১। ফাস্টফুড, তৈলাক্ত খাবার সপ্তাহে একবারের বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
২।বেশি চিনি বা মিষ্টিজাত খাবার
খাওয়ার ফলে স্মৃতিশক্তি কমে
যেতে পারে। তাছাড়া অবসাদ, ওজন কমে যাওয়া ও স্মৃতিভ্রমের সমস্যায় ভুগতে
পারেন।
৩।রেড
মিট,প্রসেসড চিজ ও মাখন খেলে দ্রুত
স্মৃতি শক্তি কমে।
৪।পনির, সাদা পাউরুটি, পাস্তা ইত্যাদিতে থাকা কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে
দেয় ও ডেমেনশিয়া রোগের সম্ভাবনা তৈরি
করে।
৫।শুনলে অবাক হবেন অতিরিক্ত চুইংগাম চিবালে
আপনার স্মৃতি শক্তি কমে যেতে পারে
তাড়াতাড়ি।
৬।অনবরত বিয়ার পান করলে স্মৃতি আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ে।
৭।তেল যুক্ত যে কোন খাবার ব্রেনের স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয় ও
ডিমেনশিয়া হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
৮।প্যাকেটবন্দি প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কোন মন্তব্য নেই
If you have any doubts please let me know