অনিদ্রা ও প্রতিকারের কিছু কৌশল | How to deal insomnia and solutions
মোবাইল, কম্পিউটার, ট্যাব, ল্যাপটপ, টিভি ইত্যাদি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকে যান্ত্রিক করে তুলছে ও প্রতিনিয়ত আমাদের ঘুমে সেটার প্রভাব পড়ছে।অন্যদিকে যারা পরিমিত ঘুমান, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেন, হাটাহাটি বা জগিং করেন অথবা ইয়োগা করেন তাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা কম হয়, কাজের গতি বাড়ে । মন থাকে ফুরফুরে।
কেন হয়ঃ
১। ধূমপান,
অতিরিক্ত ক্যাফেইন
(চা/কফি)বা অ্যালকোহল সেবন।
২। ঘুমের আগে টিভি দেখা, খামোবাইল,
ল্যাপটপ চালানো বা যে কোন গেমস খেলা।
৩।দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক
অসুস্থতা, যেমন: ক্যানসার,হাঁপানী,হৃদরাগ,
ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস,গ্যাস্ট্রিক, থাইরয়েডের সমস্যা
ইত্যাদি।
৪। দুশ্চিন্তা,যে
কোন কারনে মানসিক চাপ,
কোন সম্পর্কের কারনে
পারিবারিক টেনশন, বিষণ্নতা ইত্যাদি।
৫। ঘুমের অনুপযুক্ত পরিবেশ যেমনঃ অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা,বেশী
আলো বা শব্দ।
৬। অনিয়মিত ঘুম (sleeping problems) অর্থাৎ একেক দিন একেক সময় ঘুমানো।
৭। ৬০ বছর বা
তার পর থেকে বয়স্ক পুরুষদের
ক্ষেত্রে ঘুমের পরিমাণ ৩ থেকে ৪ শতাংশ কমে যায় আর
মহিলাদের ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের
মাত্রা বেশি থাকার জন্য ঘুমের মাত্রা
ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
কি করবেনঃ
১।ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে
ফেলুন। হালকা হাটাহাটি করতে পারেন খাবার পর, এতে হজমে সাহায্য হবে। খেয়েই ঘুমিয়ে
পড়বেন না।
২।প্রতিদিন একই
সময়ে ঘুমানোর ও একই সময়ে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন। যদি
ও প্রথমে কঠিন মনে হতে পারে কিন্তু কিছুদিন নিয়মিত চেষ্টা করে গেলে এক সময় এটি
অভ্যাসে পরিনত হবে।
৩। দুপুরে ঘুমালে
ও সেটি যেন ৩০ মিনিটের বেশি
না হয়।
৪। ঘুমানোর
চার-পাঁচ ঘণ্টা আগে থেকে
কোন ভারী কাজ বা ব্যায়াম করবেন না।
৫। ঘুমের আগে অ্যালকোহল, কফি,
ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
৬।শোয়ার আগে এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন।
দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান, যা আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে।
৭।বিছানা খুব বেশী নরম বা খুব বেশী শক্ত না হওয়াই ভালো। ডান দিকে কাত হয়ে শোবার অভ্যাস করুন। বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে লিভার, ফুসফুস, হার্টের ওপরে চাপ সৃষ্টি হয়। উপুড় হয়ে বা পেটের উপর ও শোবেন না, এতে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে, তা ছাড়া ঘাড়ে ও শরীরের পেছনে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।
৮। কুসুম গরম পানিতে গোসল, শরীরের মাংস পেশীকে শিথিল করে। ঘুমের কিছু আগে
গোসল সেরে নিতে পারেন।
৯। ঘুমাতে
যাওয়ার সময় সারা দিনের কোন রকম অস্বস্তিকর স্মৃতি,টেনশন,কারো কোন খারাপ আচরন
ইত্যাদি মাথায় আনবেন না। টিভিতে আপনার ভালো লাগে এমন কোন প্রোগ্রাম বা মোবাইলে কোন
কমেডি,মুভি —মোট কথা ভালো কোন স্মৃতি মাথায় নিয়ে ঘুমাতে যাবেন। তবে
যেটি যেন খুব লম্বা না হয়।
কি করবেন নাঃ
১।খাবার পর ঘুমানোর আগে সিগারেট খেলে বা অন্য কোনো রকম নেশা করলে
সেটা শরীরকে দুর্বল করে দেয়, তাতে ক্লান্তির কারনে ঘুম আসতে দেরী হবে।
২।ঘুমানোর আগে ভালো লাগে এমন বই বা কিছু পড়লে ঘুম আসবে না। তাই
রাতে ঘুমানোর আগে পছন্দের কিছু না পড়াই ভালো।
৩।ঘুমাতে যাওয়ার আগে আগে বাচ্চার সঙ্গে খেলবেন না, গল্প করবেন না।
৪।ঘুমাবার ঠিক আগে ব্যায়াম করলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে ঘুম
বাঁধা গ্রস্ত হয়।
৫।টিভি,মোবাইল বা ল্যাপটপে কাজ করবেন না ঘুমানোর আগে । এসব থেকে
নির্গত হওয়া আলোকরশ্মি ঘুমের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
৬।অতিরিক্ত ঘুম--ডায়াবেটিস এবং হার্টে বড় ধরনের সমস্যার কারন হতে পারে। তা ছাড়া বেশী ঘুমের কারনে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যায়।
৭। ঘুমের ওষুধ একদম না।
কি কি জটিলতা হতে পারেঃ
১।গবেষণায়
প্রমানিত,যারা রোজ রাতে পরিমাণের চেয়ে বেশি ঘুমায় কিংবা ঘুম কম হয়, তাদের
ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে।
২।অতিরিক্ত ঘুম ওজন বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৩।মাথাব্যথা,পিঠব্যাথা ছাড়া ও কাজের গতি কমে যাবে,হতাশা বাড়বে।
৪।বেশী ঘুমের কারণে আপনার হার্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫।রাতে ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুমানো লোকদের মৃত্যুহার, সাধারণ
মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।
অনিদ্রা (sleeping problem in night) দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়ঃ
১। ২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ও মধু, ১ গ্লাস গরম পানির সাথে মিশিয়ে ঘুমাবার আগে পান করুন নিয়মিত।অনিদ্রার
খুব ভাল কাজ করে এই টনিক।
২। কলাতে থাকে এমিনো এসিড অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটা বার বার ঘুম ভেংগে যাওয়ার সমস্যাও তাড়ায়। এতে আছে উচ্চমাত্রায় লৌহ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং মিনারেলস যা মনকে প্রশান্ত করে।
রাতের খাবার খাওয়ার পর একটা কলা খেলে ভাল ঘুম হয়।
৩। গরম দুধের
ট্রাইপটফান ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে। ১ কাপ গরম দুধের সাথে সামান্য দারচিনীর গুড়া মিশিয়ে পান করুন
রাতে ঘুমানোর আগে।
৪। গরম পানি দিয়ে গোসল,অনিদ্রা দূর করার খুব ভাল একটি উপায়। এতে শরীরে শিথিলতা আসবে, স্নায়ুগুলো
ও প্রশমিত হবে, যা ঘুমের জন্য খুব দরকার। গরম পানির সাথে কয়েক ফোঁটা ক্যামোমিল, রোজমেরি বা লেভেন্ডার তেল ও মিশিয়ে নিতে পারেন। গোসল
সারবেন ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে।
৫। ২ চামচ মেথি রসের সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খান প্রতিদিন ।
৬। চেরি ফলের রসঃ ১ কাপ চেরি ফলের রস পানে অনিদ্রা সমস্যা দূর হয় এবং ভাল ঘুম হয়। চেরি ফলের প্রচুর ট্রিপটফান আছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এমিনো এসিড যা নিদ্রা তৈরির কাজে ব্যবহৃত মেলাটোনিনকে আরো কার্যক্ষম করে। দৈনিক এক কাল চেরি ফলের রস খেলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হয়।
৭। ১ চা চামচ জায়ফলের গুড়ার ১ কাপ গরম পানি বা অন্য যে
কোন তরল যেমন দুধ বা জুসের সাথে মিশিয়ে পান করুন।
৮। ১ চা চামচ জিরার গুঁড়া একটু ভেজে নিয়ে এক কাপ পানির সাথে ঘুমানোর আগে পান করুন। হজম শক্তি বাড়াতে ও
জিরা বেশ উপকারী।
৯।এক গ্লাস গরম দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে ঘুমানোর আগে পান করুন।
নিয়মিত খেলে অনিদ্রা দূর করতে এটি বেশ কার্যকরী।
কোন
বয়সে কত ঘণ্টা ঘুমঃ
|
বয়স |
কত সময় (ঘন্টা) |
|
০-৩ মাস |
১৪ থেকে
১৭ ঘণ্টা |
|
৪-১২ মাস |
১২ থেকে
১৬ ঘণ্টা |
|
১-২ বছর |
১১ থেকে
১৪ ঘণ্টা |
|
৩-৫ বছর |
১০ থেকে ১৩ ঘন্টা |
|
৬-১২ বছর |
৯ থেকে ১২ ঘন্টা |
|
১৩-১৮ বছর |
৮ থেকে ১০ ঘন্টা |
|
১৮ থেকে ৬০ বছর |
৭ ঘন্টা বা কিছু বেশী |
|
৬১ থেকে ৬৪ বছর |
৭ থেকে ৯ ঘন্টা |
|
৬৫ বা তার বেশী |
৭ থেকে ৮ ঘন্টা |
Ref:
https://www.cdc.gov/sleep/about_sleep/how_much_sleep.html
জেনে রাখুন:
১।যারা প্রতিরাতে ৯ ঘণ্টা কিংবা
তার চেয়ে বেশি
সময় ঘুমান, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি স্বাভাবিকের চেয়ে
দ্বিগুণ থাকে এবং
অন্যান্য হৃদরোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা ১০%
বেড়ে যায়।
২। যাদের ঘুম
পর্যাপ্ত পরিমাণে হয় না তাঁরা পরীক্ষাতেও অন্যদের তুলনায় খারাপ ফলাফল করে।

কোন মন্তব্য নেই
If you have any doubts please let me know