হাড়ের ক্ষয় ও প্রতিকার | how to prevent osteoporosis
অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোগে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়,হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে খুব অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যেতে পারে। এটা সাধারণত বয়স্কদের বেশি হয়।
লক্ষন কি কিঃ
১।কোমর
বা পিঠে ব্যথা যা ওষুধ খেয়ে ও কমছে না।
২।দৈহিক উচ্চতা কিছুটা কমে যেতে
পারে, বা কুঁজো হয়ে যেতে পারেন।
কেন হয়ঃ
১।নিয়মিত ব্যায়াম না করলে।
২।দেহে
ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাব।
৩।ধূমপান
করলে পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে এবং হাড় ক্ষয় বাড়ে।
৪।শরীরে
থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে।
৫।মেয়েদের
ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং ছেলেদের টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে।
৬।বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা,কফি,চকোলেট
খাওয়ার অভ্যাস।
৭।পরিবারের কারো অস্টিওপোরোসিস
থাকলে ।
৮। খিঁচুনীবিরোধী
ওষুধ খেলে।
৯। দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন।কবিরাজি, আয়ুর্বেদী, হোমিওপ্যাথি,
ইউনানি ওষুধে স্টেরয়েড
বেশী মাত্রায় থাকে।
১০। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যায়াম বা শারীরিক
পরীশ্রম না করলে ।
১১। শরীরের ওজন গড় থেকে বেশী থাকলে। বাড়তি ওজনের চাপের কারণে হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ে।
১২। রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস রোগ থাকলে।
কি করবেনঃ
১।ধূমপান ও মদ্যপান হাড় গঠনকারী কোষের
কার্যকারীতা কমিয়ে দেয়।এই অভ্যাস গুলো ত্যাগ করুন।
২।দুধ,দইয়ে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি, যা হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। তবে দুধে অ্যালার্জি থাকলে দুধের তৈরি যে কোন খাবার খেতে পারেন।
৩।প্রচুর ক্যালসিয়াম জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করুন সারাদিন। প্রত্যেকবার খাবারের
তালিকায় উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রাখুন।
যেমনঃ বিন্স ও ডাল,কাজুবাদাম,লেটুস পাতা বা শালগমের পাতা,সবুজ শাক সবজি,পালং শাক বা ব্রকোলিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি থাকে ৷
৪।ছোট
মাছের কাঁটায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে।এ ছাড়া মাছের তেল মহিলাদের হাড়
ক্ষয়ের সমস্যা কমাতে পারে৷
৫।লেবুতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি,
যা হাড়ের কোলাজেন ও তন্তুময় অংশ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।কমলার মধ্যে রয়েছে
ভিটামিন-সি। দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদার ৬ ভাগ পূরণ করতে পারে একটি কমলা।
৬। নিয়মিত
হাটা,দৌঁড় বা হাল্কা ব্যায়াম, ভার বহন হাড়ের কোষকে উদ্দীপ্ত করে, হাড়ের ঘনত্ব
বাড়ায়। জয়েন্টগুলোকে
সচল রাখে ও রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।
৭।প্রতিদিন
আধা কাপ কাঠবাদাম খান। এটি হাড় মজবুত করে,ওজন কমাতে সাহায্য করে ও হার্টকে ভালো
রাখে।
৮।ভিটামিন
ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলোতে। মাশরুম, পনির, ডিম, স্যামন মাছ, টুনা মাছ ইত্যাদির মধ্যে
রয়েছে ভিটামিন ডি। তা ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ও খেতে
পারেন।
৯।নিজের
শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করুন। বাথরুমে বা পিচ্ছিল জায়গায় হাটতে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
১০।ভিটামিন কে-টু হাড়ের স্বাস্থ্য
ভাল রাখতে সাহায্য করে। লিভার, ডিম,পনির এবং মাংস মধ্যে অল্প পরিমাণে এই ভিটামিন পাওয়া
যায়।
১১।কোলাজেন প্রোটিন
হাড়, পেশী, লিগামেন্ট ও অন্যান্য টিস্যু নির্মাণ করতে সহায়তা
করে।এটি বিভিন্ন প্রাণীর মাংস,প্রানীর হাড়, মাংস, ডিম থেকে পাওয়া যায়।
১২। অতিরিক্ত ওজনও হাড় ক্ষয় এবং ভঙ্গুর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়, তাই যে কোন ভাবে শরীরের ওজন সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। স্থিতিশীল স্বাভাবিক বা একটু সামান্য বেশি ওজনই হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য মানানসই।
১৩।জিংক একটি খনিজ উপাদান, যেটি স্বল্প পরিমাণে হলেও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য্য। জিংক সাপ্লিমেন্ট শিশুদের হাড় গঠন জোরদার করতে সাহায্য করে এবং বৃদ্ধ বয়সে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। জিংকের ভাল উৎস গুলোর মধ্যে রয়েছে গরুর মাংস, চিংড়ি,কলা,কিছু চর্বিযুক্ত মাছ বাদাম, শাক, শণ-বীজ, ঝিনুক এবং কুমড়া বীজ।
১৪। ওমেগা
-3 ফ্যাটি এসিড নতুন হাড় গঠন জোরদার করতে এবং বয়সকালে হাড়ের ক্ষয় থেকে সুরক্ষা
পেতে সাহায্য করে।মাছ,সয়াবিন তেল,বাদাম,কড লিভার অয়েল, ওয়ালনাট, সী ফুডে প্রচুর
পরিমানে ওমেগা -3 ফ্যাটি এসিড রয়েছে।
কি করবেন নাঃ
১।ফাস্টফুড,চিপস,হাড়ের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এগুলো খাবেন
না।
২। কোমল পানীয়তে রয়েছে ফসফরিক
অ্যাসিড, যা প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহের ক্যালসিয়াম শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে
অস্থি ক্ষয় হতে থাকে। যে কোন কোমল পানীয় থেকে দূরে থাকুন।
৩।অতিরিক্ত লবণ খেলে,হাড় দুর্বল হয়ে যায়। তাই কাঁচা
লবন একদম নয়।
৪।অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে শরীরে অধিক অ্যাসিড তৈরি হয়। ফলে
একে নিষ্ক্রিয় করতে বেশী ক্যালসিয়াম কাজ করে থাকে। যার ফলে হাড়ে ক্যালসিয়াম কম জমা
হয় ও হাড়ের ক্ষতি হয়।তাই মাংস পরিমিত খান।
৫।হাড়ের নতুন কোষ গঠনে অ্যালকোহল বাধার সৃষ্টি করে। হাড় সুগঠিত হয় না। তাই অ্যালকোহল পরিহার করুন।
৬। অতিরিক্ত ওজন বহন করবেন না।
৭।অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার
হাড়ের থেকে ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল শুষে নেয়,হাড় দুর্বল
হয়ে ক্ষয় বেড়ে যায়। তাই খাবার তালিকা থেকে চিনিযুক্ত খাবার কমিয়ে ফেলুন।
৮।ক্যাফেইন ও হাড় থেকে
ক্যালসিয়াম শুষে নেয়। তাই বেশি চা-কফি পান না করাই ভালো।
জেনে রাখুনঃ
১। যারা
অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে ৮০ ভাগই মহিলা (osteoporosis after menopause) এবং ২০
ভাগ পুরুষ।
২। নারীদের
পিরিয়ডের পর হাড় ক্ষয়ের হার বেড়ে যায়।
৩। শৈশবকালে অধিক পরিমাণে সবুজ ও হলুদ শাকসবজি গ্রহণ করলে হাড়ের
খনিজায়ন বা ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং তরুণ ও পরিণত বয়সে হাড়ের ভর বজায় থাকে।

কোন মন্তব্য নেই
If you have any doubts please let me know